পাকিস্তানকে একঘরে করার প্রক্রিয়া শুরু ভারতের

দাবি উঠেছিল দীর্ঘদিন ধরেই। অবশেষে পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পর পাকিস্তানকে বাণিজ্যিক দিক থেকে একঘরে করার প্রক্রিয়া শুরু করল ভারত। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জেরে পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’ (এমএফএন) স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করে নিল ভারত। খবর: আনন্দবাজার পত্রিকা।

শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এর ফলে বাণিজ্যিক ভাবে ভারতের কাছ থেকে কার্যত সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে ইসলামাবাদ। অন্যদিকে নয়াদিল্লিতে পাক হাই কমিশনার সোহেল মাহমুদকে ডেকে পাঠিয়েছে ভারত।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে জম্মু কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় দেশটির বিশেষায়িত বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪০ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। তারপর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রোশে ফুঁসছে গোটা ভারত। কূটনৈতিক মহলে দাবি উঠেছে, সন্ত্রাসে মদতদাতা পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক স্তরে কোণঠাসা করে দিক ভারত।

এর মধ্যেই শুক্রবার অরুণ জেটলি ঘোষণা দেন, পাকিস্তানকে যে এমএফএন মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, সেটা তুলে নেওয়া হল। বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় জঙ্গিদের হামলায় পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে। তাই গোটা বিশ্বের কাছে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে সব রকম চেষ্টা করবে ভারত।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডব্লিউটিও) এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনও দেশ অন্য একটি দেশকে এই এমএফএন স্ট্যাটাস দিতে পারে। এর ফলে বৈষম্যহীন বাণিজ্যের সমস্ত রকম সুযোগ পায় এমএফএন স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত দেশটি। এমএফএন স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত দেশকে বৈদেশিক বাণিজ্যে ছাড়, অতিরিক্ত কিছু সুবিধা, শুল্ক হ্রাস ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়।

জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফস বা গ্যাট চুক্তির প্রথম ধারাতেই এটা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া ডব্লিউটিও’র সদস্য দেশ হিসেবে অন্য দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের যে সুযোগ-সুবিধা পায় সেগুলিও পেয়ে থাকে এই এমএফএন স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত দেশ।

কিন্তু একটি দেশ কোনও দেশকে এই স্ট্যাটাস দিলে সেই দেশকেও ওই এমএফএন স্টেটাস দিতেই হবে এমন নয়। তারা পাল্টা এমএফএন নাও দিতে পারে। আর পাকিস্তান ঠিক সেটাই করেছে। ১৯৯৫ সালে ডব্লিউটিও গঠিত হওয়ার পরের বছরই নয়াদিল্লি এমএফএন স্ট্যাটাস দিলেও ইসলামাবাদ ভারতকে সেই স্টেটাস দেয়নি। বহুবার এ নিয়ে দাবি উঠলেও পাকিস্তান বরাবরই ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তা অস্বীকার করে উঠেছে।

অন্যদিকে ভারতের মধ্যেও বিভিন্ন সময় পাকিস্তানকে দেওয়া এই এমএফএন তুলে নেওয়ার দাবি উঠেছে। কিন্তু ভারতও এত দিন তাতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি, উরিতে জঙ্গি হামলার পরও নয়। কিন্তু পুলওয়ামা হামলার পর সেই স্ট্যাটাসই এবার তুলে নেওয়া হল। এর ফলে ভারতের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যে অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে ইসলামাবাদ। তবে কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, এর জেরে বাড়তে পারে চোরাচালান ও অবৈধ বাণিজ্য।

এসএইচ-১৩/১৫/১৯ (অান্তর্জাতিক ডেস্ক)