চীন-ভারতে অবাধ গুম খুন সরকারি বাহিনীর

ভারতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ অবাধে গুম-খুন অব্যাহত রেখেছে দেশটির সরকার ও এর নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। পুলিশি হেফাজতে চলছে নির্যাতন-নিপীড়ন ও ধর্ষণ। অব্যাহত রয়েছে অবাধ গণগ্রেফতার, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর সেন্সরশিপ।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট-২০১৮-এ দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির ভয়াবহ মানবাধিকার পরিস্থিতির এ চিত্র উঠে এসেছে।

রিপোর্টে ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রায় একই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে শুরুতেই চীনকে স্বৈর রাষ্ট্রের তকমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেই অভিযুক্তদের নিখোঁজ করে দেয় দেশটির সরকারি বাহিনী।

গত এক বছরে শিংজিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণগ্রেফতার অভিযান আরও জোরদার করেছে দেশটির সরকার। জাতিগত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে ফেলতে উইঘুরদের পাশাপাশি ওই কাজাখ জাতিগোষ্ঠী ও অন্যান্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর অন্তত ৮ লাখ সদস্যকে বন্দিশিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতি বছর মার্কিন কংগ্রেসের কাছে বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। এতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও শ্রম অধিকার সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা হয়।

বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং এতে উপস্থাপিত তথ্য মার্কিন কংগ্রেস, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ প্রামাণিক উপাত্ত হিসেবে গ্রহণ করে।

বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর উপস্থাপন করা ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অন হিউম্যান রাইটস প্রাক্টিস’ শীর্ষক রিপোর্টে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে ভারত ও চীনের ভয়াবহ মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

রিপোর্ট মতে, ভারতে গত এক বছরে সন্দেহভাজন আসামি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ঢালাও ও বেআইনি খুন-গুম ও গণগ্রেফতার চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৭-১৮-এর উপাত্ত অনুযায়ী, ভারতজুড়ে ৫৯ জনকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে হত্যা করা হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরও বেশি।

অলাভজনক সংস্থা ইন্সটিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট চালিত সাউথ এশিয়ান টেররিজম পোর্টালের মতে, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১৫২ বেসামরিক নাগরিক, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত ১৪২ ও ৩৭৭ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী। পুলিশ বা সরকারি বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা আরও বেশি এবং সেটা অব্যাহত রয়েছে।

গত বছরের ১৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৭-এর এপ্রিল থেকে ২০১৮-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে এক হাজার ৬৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের এক রিপোর্ট মতে, ওই সময়ে প্রতিদিন ৫ জনের বেশি মানুষ পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে।

ভারতের অন্য রাজ্যের তুলনায় অধিকৃত কাশ্মীরের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ‘রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন অব হিউম্যান রাইটস ইন কাশ্মীর’ শীর্ষক রিপোর্টে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৬-এর জুন থেকে ২০১৮-এর এপ্রিল পর্যন্ত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১৪৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে নিহত হয়েছে ২০ জন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চীনের নিন্দা জানিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন মুসলিমদের সঙ্গে যে আচরণ করছে তা দেশটিতে ১৯৩০ সালের পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।’

রিপোর্টে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিরোধীদের অবাধ ও বেআইনি গ্রেফতার, গুম ও বন্দিশিবিরে লাখ লাখ মানুষকে নির্যাতন, ব্যাক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ প্রভৃতি চালাচ্ছে সরকার ও এর নিরাপত্তা বাহিনীগুলো।

সাংবাদিক, আইনজীবী, লেখক, ব্লগার্স ও সরকারের সমালোচক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর হচ্ছে শারীরিক আক্রমণ। ফাসানো হচ্ছে মামলায়। সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, শান্তিপূর্ণ র‌্যালি সমাবেশে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।

এসএইচ-০৯/১৬/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)