ইমরানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চাপে মোদি

পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে নিজ দেশে চাপের মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে ঝড় তুলেছে কংগ্রেস। যা সামলাতে দলে নিজের প্রধান সেনাপতি অমিত শাহকে ময়দানে নামাতে হলো মোদিকে। বিজেপি সভাপতি বালাকোট অভিযান নিয়ে স্যাম পিত্রোদার মন্তব্যকে হাতিয়ার করে প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদ নিয়ে। খবর আনন্দবাজারের।

পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শুভেচ্ছার বার্তা পাঠিয়েছিলেন মোদি। সরকার তা গোপন রাখার চেষ্টা করলেও রাতে ওই শুভেচ্ছা বার্তা টুইট করে দেন ইমরান। পুলওয়ামা হামলার জবাবে বালাকোট অভিযান নিয়ে বিজেপির তাবৎ নেতা-মন্ত্রীরা যখন ভোটের মুখে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিগিরে হাওয়া জোগাতে ব্যস্ত, তারই মধ্যে ইমরানের ওই চালে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে যায় মোদি সরকার। মুখে গরম, কাজে নরমের এই ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস তেড়েফুঁড়ে মাঠে নামে। বিজেপিরই অনেকে ঘরোয়া মহলে স্বীকার করছেন, মোদির ওই চিঠি বিরোধীদের মুখ খোলার সুযোগ করে দিয়েছে।

শুভেচ্ছা বিতর্কের অস্বস্তি কাটাতে বিজেপি সভাপতি অস্ত্র করেন কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ পিত্রোদার মন্তব্যকে। বালাকোট অভিযানে কত জঙ্গি নিহত হয়েছে, পিত্রোদা সেই সত্য জানতে চেয়েছেন গতকাল। তার যুক্তি, প্রশ্ন তোলা মানেই অবিশ্বাস করা নয়। সরকার সত্যটা জানাক। তার ওই মন্তব্যের জন্য আজ রাহুল গান্ধীর জবাবদিহি দাবি করেন অমিত। কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করেন, সংখ্যালঘু তোষণ ও পাকিস্তানকে খুশি করতেই কংগ্রেস দেশের ‘শহিদদের অপমান’ করে চলেছে। কংগ্রেস অবশ্য পিত্রোদার মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত’ আখ্যা দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলেছে।

এর আগে সকালেই পাকিস্তানকে শুভেচ্ছার জানানোর কথা গোপন করা নিয়ে কংগ্রেসের রণদীপ সুরজেওয়ালা ‘চৌকিদার’ প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মোদি বলতেন, পাকিস্তানকে তাদের ভাষায জবাব দেওয়া উচিত। সেই মোদিই পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে পাক প্রধানমন্ত্রীকে প্রেমপত্র পাঠিয়ে জাতীয় দিবসে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন! অথচ সন্ত্রাস প্রশ্নে তিনি নীরব। মোদির পাকিস্তান প্রেম সবাই জেনে গিয়েছেন। তিনি সে দেশে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পরেই পঠানকোটে হামলা হয়েছিল। মোদির পেশি আস্ফালনের নাটক কেবল জনগণ ও সংবাদমাধ্যমের জন্য।’

সরব হন মায়াবতীও। তার মন্তব্য, ‘এক দিকে ভোটব্যাংকের রাজনীতির জন্য তীব্র পাকিস্তান-বিরোধী অবস্থান ও আক্রমণাত্মক বিবৃতি। কিন্তু অন্য দিকে, পাক প্রধানমন্ত্রীকে গোপনে শুভেচ্ছাপত্র পাঠানো। দেশের ১৩০ কোটি মানুষের সঙ্গে বিজেপির এই ছল-চাতুরির রাজনীতি কি ঠিক? জনগণের সতর্ক থাকা উচিত।’

সরকারের একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে পাকিস্তানকে তাদের জাতীয় দিবসে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এটাই দস্তুর। অন্য দেশের ক্ষেত্রেও তা করা হয়। পুলওয়ামা কাণ্ডের পর এমনিতেই আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তান কোণঠাসা। তাই কূটনীতির ক্ষেত্রে অহেতুক রণংদেহি মনোভাব প্রকাশ করে নয়া দিল্লির অবস্থান লঘু করা অর্থহীন বলে মনে করেছে সাউথ ব্লক। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপির অনেকে স্বীকার করছেন, দল যখন পাকিস্তান প্রশ্নে কড়া অবস্থান নিয়েছে, সরকার বয়কট করছে তাদের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান— তারই মধ্যে ওই শুভেচ্ছা বার্তায় কিছুটা হলেও লঘু করা হয়েছে দল ও সরকারের অবস্থান।

এসএইচ-২৪/২৫/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)