আইএসবধূ শামীমার যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার আকুতি

যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের স্কুলপড়ুয়া তিন বান্ধবী একসঙ্গে নিখোঁজ হয়। তিন দিন পর জানা যায় তারা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিরিয়ায় পাড়ি দিয়েছেন। সেই তিন মেয়ের একজন শামীমা বেগম এখন যুক্তরাজ্যে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেছে। সম্প্রতি দ্য টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্য ফেরার আর্জি জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১৯ বছরের ব্রিটিশ এই তরুণী।

শামীমার তৃতীয় সন্তান মারা যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আমি আমার আগের সব কিছুর জন্য খুবই অনুতপ্ত। যুক্তরাজ্যে ফেরার জন্য দ্বিতীয় বারের মতো একটি সুযোগ চাই।

শামীমার স্বামী সিরিয়া যুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে আত্মসমর্পণ করেন। আর শামীমাকে সিরিয়ায় একটি শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে, ব্রিটেনের বিরোধী রাজনৈতিক মহল থেকে শামীমার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে শামীমার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যায় তা দেখতে।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি গেটউইক বিমনবন্দর দিয়ে তুরস্কে পাড়ি দেন তিন মেয়ে শামীমা বেগম, আমিরা আবাসি ও খাদিজা সুলতানা। সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়া যান। শামীমা বেগম, খাদিজা সুলতানা ও শারমিনা বেগম এই তিনজন বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান। বেথনাল গ্রিন একাডেমির তিন ছাত্রীর মধ্যে শামীমা বেগম ও আমিরা আবাসির বয়স ছিল ১৫ বছর। অপর ছাত্রী খাদিজা সুলতানা ছিলেন ১৬ বছর বয়সী। তাদের তিন মাস আগে একই বিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিনা বেগম নামের আরেক শিক্ষার্থী সিরিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন। শারমিনার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরেই তিন মেয়ে একসঙ্গে সিরিয়ায় পাড়ি দেন বলে ধারণা। এর মধ্যে খাদিজা সুলতানা ২০১৬ সালে বোমা হামলায় নিহত হন বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল।

যুক্তরাজ্যের দৈনিক টাইমসকে বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী শামীমা বেগম বলেন, সিরিয়া প্রবেশ করে তারা সরাসরি রাক্কায় চলে যান। সেখানে একটি ঘরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তরুণীদের একসঙ্গে রাখা হয় বিয়ে দেওয়ার জন্য। শামীমা ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী ইংরেজি ভাষায় কথা বলে এমন ছেলেকে বিয়ের জন্য আবেদন করেন। ১০ দিনের মাথায় ২৭ বছর বয়সী ডেনমার্কের ধর্মান্তরিত এক ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শামীমা জানান, তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে আইএসের শেষ ঘাঁটি বাঘুজ এলাকায় ছিলেন। সেখান থেকে পালিয়ে আসার সময় তাঁর স্বামী সিরিয়ান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

আর তিনি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। শরণার্থী শিবিরেই তৃতীয়বারের মতো সন্তানের জন্ম দিয়েছেন শামীমা। এর আগে অপুষ্টি আর রোগে ভুগে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তার প্রথম সন্তান ছিল মেয়ে। ১ বছর ৯ মাস বয়সী ওই সন্তানকে এক মাস আগে সিরিয়ার বঘুজ এলাকায় দাফন করেছেন। এর তিন মাস আগে তার আট মাস বয়সী দ্বিতীয় সন্তান মারা যায়। শামীমা বলেন, সেখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ-চিকিৎসক কিছুই ছিল না। তাদের বঘুজ এলাকা ছাড়ার পেছনে এটিও একটি কারণ। এদিকে, কয়েক দিন আগে শামীমার তৃতীয় সন্তানটিও মারা যায়।

শামীমার ব্রিটেনে ফিরতে চাওয়ার এ দাবিকে সমর্থন করে দেশটির বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, শামীমা বেগমের ব্রিটেনে ফেরার অধিকার রয়েছে। নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিষয়টিকে চরম পন্থা বলেও অভিহিত করেন তিনি। করবিনের মতো একই মত দিয়েছেন ব্রিটেনের শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ডায়ান অ্যাবোট।

এসএইচ-১০/০২/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)