শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বিস্ফোরণে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, কারফিউ জারি

শ্রীলঙ্কার রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের গির্জা ও বিলাসবহুল হোটেলসহ আটটি স্থানে কয়েক দফা বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯০ জনে। নিহতের মধ্যে অন্তত ৩৫ বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক নাগরিক।

রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এই ভয়াবহ হামলার ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। এছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া সোমবার ২২ এপ্রিল ও পরশু মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারির দপ্তর থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ইন্ডিয়া টুডে খবর দিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। তবে তাদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন ও এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোববার সাকল পৌনে নয়টার দিকে হওয়া এই বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত তিন শতাধিক মানুষকে কলম্বোসহ বেশ কিছু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শ্রীলঙ্কার ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১০০ জন নিহত ও আরও চার শতাধিক আহত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হোটেল ও গির্জাসহ ছয়টি বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন শতাধিক মানুষ আহত মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স কলম্বোর ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালকের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রোববার সকালের এ বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক নিহত এবং ৪০০ শ’র অধিক আহত হয়েছেন।

যে তিনটি গির্জায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো কোচকিকাদে, কাতুয়াপিটিয়া ও বাট্টিকালোয়া নামক স্থানে অবস্থিত। এসব গির্জায় ইস্টার সানডে উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল।

তাছাড়া রাজধানীর সাংগ্রি লা, দ্য কিন্নামোন এবং কিংসবারি নামক আরও তিনটি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হোটেল তিনটি রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, কাতুয়াপিটিয়াতে অবস্থিত সেন্ট সেবাস্তিয়ান নামক গির্জার ছাদ ধসে পড়েছে এবং গির্জার মূল স্থানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, নিহতদের মধ্যে বিদেশী পর্যটকও আছেন।

পুলিশ বলছে, যে তিনটি গির্জায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তার একটি কলম্বোতে অপর আরেকটি রাজধানীর অদূরের নিগোম্বোতে। তবে তৃতীয় যে গির্জায় বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে বাটিকোলোতে। বিস্ফোরণের প্রকৃতি সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

হার্শা ডি সিলভা নামের শ্রীলঙ্কার এক সংসদ সদস্য (এমপি) জানান, তিনি একটি হোটেল গিয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি শরীরের বিচ্ছিন্ন অংশ চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জরুররি সেবাদানকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছেছেন।’

শ্রীলঙ্কা মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরই দেশ। দেশটিতে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের সংখ্যা মাত্র ছয় শতাংশ। ইস্টার সানডের প্রার্থনার কারণে গির্জাগুলোতে বেশ ভিড় ছিল। পুলিশ বলছে, হামলার জন্য এমন সময়কেই বেছে নিয়েছেন জঙ্গিরা।

এসএইচ-০৪/২১/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)