শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক, আটক ৭ (ভিডিও)

শ্রীলঙ্কার কলম্বোসহ আটটি স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে এ পর্যন্ত ২০৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক মানুষ। নিহতদের মধ্যে ৩৫ জন বিদেশি। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। দুই বাংলাদেশিও আছেন নিখোঁজের তালিকায়। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।

রোববার স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৯টায় খ্রীস্টান ধর্মালম্বীদের ইস্টার সানডে চলাকালীন সময়ে ছয়টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে দুপুরের দিকে আরও দুটি স্থানে বোমা হামলা হয়েছে।

সকালে যে তিনটি গির্জায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো কোচকিকাদে, কাতুয়াপিটিয়া ও বাট্টিকালোয়া নামক স্থানে অবস্থিত। এসব গির্জায় ইস্টার সানডে উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল। তাছাড়া রাজধানীর সাংগ্রি লা, দ্য কিন্নামোন এবং কিংসবারি নামক আরও তিনটি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হোটেল তিনটি রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

দুপুরের দিকে দেহিওয়ালা জেলার একটি হোটেলে এবং দেমাতাগোদা জেলার একটি স্থাপনায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোর প্রশাসনের বরাত দিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, দফায় দফায় হামলায় এ পর্যন্ত ২০৭ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে আরও পাঁচ শতাধিক মানুষকে। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে নিখোঁজ মানুষগুলোর।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি থেকে দেখা যাচ্ছে, কাতুয়াপিটিয়াতে অবস্থিত সেন্ট সেবাস্তিয়ান নামক গির্জার ছাদ ধসে পড়েছে এবং গির্জার মূল স্থানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে।

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, নিহতদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকও আছেন।

হার্শা ডি সিলভা নামের শ্রীলঙ্কার এক সংসদ সদস্য (এমপি) জানান, তিনি একটি হোটেল গিয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেছেন।

তিনি বলেন, আমি দেখেছি শরীরের বিচ্ছিন্ন অংশ চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জরুররি সেবাদানকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।

হামলার পর কলোম্বোর কাটুয়াপিটিয়ার সেন্ট সেবাস্টিন গীর্জার ফেসবুক পেজে বলা হয়, আমাদের গীর্জায় বোমা হামলা হয়েছে। এখানে যদি আপনার পরিবারের সদস্য থাকেন তাহলে আসুন, তাদের পাশে দাঁড়ান।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সিরিসেনা এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

হামলার পর শ্রীলঙ্কার স্কুল-কলেজ দুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দেশটিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

এদিকে ডেইলি মিরর বলছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রোববার সকালে যে ছয়টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তা ছিল আত্মঘাতী বোমা হামলা। পরে দুপুরের দিকে আরও দুটি স্থানে বোমা হামলা হয়েছে।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ খবর জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। আর আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুয়ান জয়াবর্ধনা।

শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধন জানিয়েছেন, অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারীরা। ইতোমধ্যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস দুর্ভাগ্যজনক এই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সব অপরাধীকে যত দ্রুত সম্ভব হেফাজতে নেওয়া হবে। তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

কালে যে তিনটি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তার মধ্যে একটি হলো হোটেল সাংরি-লা। প্রাথমিক তদন্ত থেকে জানা গেছে, ২০ এপ্রিল ওই হোটেলের ৬১৬ নাম্বার কক্ষে যে দুজন ছিলেন তারা ইসলামী চরমপন্থার সঙ্গে যুক্ত।

ওই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ৬১৬ নাম্বার কক্ষে থাকা সন্দেহভাজন ওই দুই ব্যক্তি হোটেলের ক্যাফেটেরিয়া ও করিডরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনা। এরপর আর তাদের হোটেলে দেখা যায়নি।

তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, সন্দেহভাজন ওই দুই ব্যক্তি ২৫ কেজি ওজনের সি-৪ ধরনের বিস্ফোরকের মাধ্যমে সাংরি-লা হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলা করেন।

সূত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি মিরর বলছে, অভিযুক্ত দুই হামলাকারী হোটেলেরে যে কক্ষটিতে ছিলেন সেটি ভাঙার পর তদন্তকর্মকর্তারা সেখানে ইসলামী চরমপন্থীদের ব্যবহৃত কিছু উপাদান খুঁজে পেয়েছেন।

তবে এটা এখনো অস্পষ্ট যে বোমা হামলাকারীরা স্থানীয় নাকি ভ্রমণ ভিসা নিয়ে বিদেশি পর্যটক হিসেবে দেশটিতে অবস্থান করছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত চলছে।

হামলার পর কলোম্বোর কাটুয়াপিটিয়ার সেন্ট সেবাস্টিন গীর্জার ফেসবুক পেজে বলা হয়, আমাদের গীর্জায় বোমা হামলা হয়েছে। এখানে যদি আপনার পরিবারের সদস্য থাকেন তাহলে আসুন, তাদের পাশে দাঁড়ান।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সিরিসেনা এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

হামলার পর শ্রীলঙ্কার স্কুল-কলেজ দুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এসএইচ-৩৪/২১/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)