শ্রীলংকায় মৃতের সংখা বেড়ে ২৯০, কারফিউ জারি, মসজিদে হামলা

শ্রীলংকায় ইস্টার সানডেতে গির্জা ও হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় হওয়া আট বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯০ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া আহত চিকিৎসাধীন রয়েছেন অন্তত ৪৫০ জন। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

এদিকে শ্রীলঙ্কায় নতুন করে কারফিউ জারি করেছে সরকার। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যা ৮টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে।

এর আগে সিরিজ বোমা হামলার পর রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করেছিল।

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোসহ বিভিন্ন শহরের গির্জা ও হোটেলে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও কমপক্ষে ৫০০ জন।

শ্রীলঙ্কার রাজধানীর কলম্বোসহ দেশটির বিভিন্ন গির্জা ও পাঁচ তারকা হোটেলে সিরিজ বোমার হামলার তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। তাদের দাবি, কলম্বোর গ্র্যান্ড হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ করার ঠিক আগে হোটেলের খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল ‘মোহম্মাদ আজম’ নামের এক আততায়ী। ঠিক যে সময় তার পাতে খাবার তুলে দেওয়ার কথা তখনই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয় সে। হোটেলে সে সময় প্রচুর মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই অনেকের প্রাণ যায়। দৌঁড়তে গিয়ে আহতও হন অনেকে। খবর এনডিটিভির।

হোটেলের ম্যানেজার জানিয়েছেন, লাইনে দাঁড়িয়ে খাবারের কাউন্টারের সামনে পর্যন্ত যায় আজম। তারপরই সে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়। খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মী সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয় হামলাকারী।

রোববার খ্রিষ্টানদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইস্টার সানডেতে গির্জায় প্রার্থনারত মানুষ ও অভিজাত হোটেলসহ মোট আট জায়গায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে। তবে কে বা কারা এই হামলা চালিয়েছে সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কোনো দল বা গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি। হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন বিদেশি রয়েছেন।

বিভিন্ন শহরের গির্জা ও হোটেলে ভয়াবহ বোমা হামলায় ব্যাপক হতাহতের পর দেশটির বেশ কয়েটি শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে পানিতে বিষ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে কে বা কারা ছড়িয়ে দেয় যে, হামলার পর বেশ কয়েকটি শহরের পানিতে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কেলানিয়া, কিরিবাথগোডা ও জা-এলাসহ বেশ কয়েকটি শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

তবে দেশটির পুলিশ এটিকে পুরোপুরি মিথ্যা ও গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানির মধ্যেই মসিজদ ও মুসলিমদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর দিয়েছে, রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে কলম্বোর তিনটি গির্জায় ইস্টার সানডেতে প্রার্থনারতদের ওপর প্রথমে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা করে।

এরপর ২০ মিনিট পরে শহরের তিনটি পাঁচ তারকা হোটেলে একই ধরনের হামলা চালায়। আর দুপুরে আরও দুটি স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

এসব হামলার পর দেশটিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

রয়টার্স বলছে, সন্ত্রাসী হামলার জেরে শ্রীলঙ্কায় নতুন করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে পুলিশ জানিয়েছে, রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরাঞ্চলের একটি মসজিদে পেট্রলবোমা নিয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে।

এদিকে, শ্রীলংকা পুলিশ জানিয়েছে, রোববার দিনের শেষের দিকে রাজধানী কলম্বোর প্রধান বিমানবন্দরের নিকটে একটি পাইপ বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে দেশটির বিমানবাহিনী। ধারণা করা হয়, এই বোমাটি দিয়ে নবম হামলার পরিকল্পনা ছিল হামলাকারীদের।

আট বোমা হামলা
সর্ব প্রথম হামলার খবর পাওয়া যায়, কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি’স গির্জায়, সকাল ৮:৪৫ এর দিকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও পাঁচটি হামলার খবর পাওয়া যায়।

সেইন্ট অ্যান্থনি’স গির্জায় হামলার কিছুক্ষণ পরই নিজেদের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বোমা হামলার কথা জানায় নেগোম্বোর কাতুওয়াপিতিয়ার সেইন্ট সেবাস্টিয়ান’স গির্জা। গির্জাটি তাদের পোস্টে লেখে, ‘আমাদের গির্জায় বোমা হামলা হয়েছে। দয়া করে আসুন ও আপনাদের পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করুন।’

হামলার শিকার এক গির্জা

প্রায় একই সময়ে বাত্তিচালোয়া ও কলম্বোর কোচিকারে জেলায় আরও দু’টি গির্জায় বোমা হামলার খবর প্রকাশিত হয়। স্থানীয় পুলিশ জানায়, গির্জার কিংসবুরি হোটেল ও শাংরি-লা হোটেলেও বোমা হামলা হয়েছে।

এই ছয় হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিনামন গ্র্যান্ড হোটেল ও দেহিওয়ালা শহরের এক বাড়িতে বোমা হামলার খবর পাওয়া যায়।

পুলিশ জানায়, কোনো কোনো হামলা আত্মঘাতীও ছিল।

হামলাকারী কারা?
শ্রীলংকায় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় কারা জড়িত ছিল সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, স্থানীয় গণমাধ্যম অনুসারে, হামলার ১০ দিন আগে দেশটির শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের হামলা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন দেশটির পুলিশ প্রধান।

রোববার বিকেলে এ বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহ বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখবো যে, হামলা ঠেকাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কিনা। এসব বিষয়ে আমাকে বা মন্ত্রীদের অবহিত করা হয়নি। আপাতত প্রধান অগ্রাধিকার পাবে হামলাকারীদের গ্রেফতার।

এসএইচ-০৩/২২/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)