হামলাকারীদের একজন ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়ায় পড়েছেন

শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের একজন ব্রিটেনে পড়ালেখা করেছেন বলে জানিয়েছেন সে দেশের কর্মকর্তারা।

দেশটির উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় একটি কোর্স করার আগে এক হামলাকারী ব্রিটেনে পড়াশোনা করেছেন।

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান এই দাবি করেন। রুয়ান বলেন হামলাকারীদের বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

গত রোববার শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা ও তিনটি অভিজাত হোটেলসহ মোট আট জায়গায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় বুধবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসাধীন আছেন আরো প্রায় পাঁচশ’।

রুয়ান বলেন, একজন হামলাকারী যুক্তরাজ্যে পড়ালেখা করেছেন। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করেন। তারপর তিনি শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসেন।

রুয়ান আরো বলেন, অধিকাংশ হামলাকারী সুশিক্ষিত। তাঁরা মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বাধীন। তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও বেশ ভালো।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ বলছে, তারা নয়জন হামলাকারীর মধ্যে আটজনকে শনাক্ত করেছে। তাঁদের মধ্যে একজন নারী এবং এরা সবাই শ্রীলঙ্কান।

পুলিশ আরো জানিয়েছে, হামলাকারীদের মধ্যে দুজন সহোদর ভাই এবং কলম্বোর একজন ধনী মসলা ব্যবসায়ীর ছেলে। তারা শাংরি লা ও সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলে হামলা চালায়।

এদিকে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সতর্ক করে বলেছেন, সে দেশে আরও হামলার ষড়যন্ত্র চলছে। সন্ত্রাসীরা জানান না দিয়েই ফের শ্রীলঙ্কায় হামলা চালাতে পারে।

হামলায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ এ পর্যন্ত ৬০ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) শ্রীলঙ্কায় ওই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে।

সে দেশের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও বলেছেন, ‘শুধু স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এত পরিকল্পিত হামলা করতে পারে না। এর পেছনে আইএস জড়িত থাকতে পারে।’

প্রাথমিকভাব শ্রীলঙ্কা সরকার হামলার পেছেনে স্থানীয় কট্টর ইসলামিক সংগঠন ন্যাশনাল তওহীদ জামাত (এনটিজে) হাত আছে বলে জানিয়েছিল। তবে হামলাকারী শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের সঙ্গে কিভাবে আইএস এর যোগাযোগ হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তাও চেয়েছে কলম্বো সরকার। হামলার তদন্তে ইতোমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল। ইতোমধ্যে তারা একটি দল কলম্বোয় পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক এই সংস্থাটি।

এছাড়া হামলার ঘটনার তদন্তে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য সে দেশের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে (এফবিআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আত্মঘাতী বোমা হামলার দুই ঘন্টা আগে এ বিষয়ে কলম্বোকে সতর্ক করেছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানায়।

প্রসঙ্গত, রোববার ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় শ্রীলঙ্কায় দুই দফায় তিন গির্জা ও চারটি বিলাসবহুল হোটেলসহ আট জায়গায় বোমা হামলা হয়।

সকালে প্রথমে হামলার শিকার হয় ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের তিনটি বড় গির্জা সেইন্ট অ্যান্থনি চার্চ, সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ ও জিয়ন চার্চ। ইস্টার সানডের প্রার্থনায় এসব চার্চে সমবেত হয়েছিলেন হাজারো মানুষ।

এছাড়া হামলা হয় কলম্বোর পাঁচ তারকা হোটেল শাংরি লা, কিংসবুরি ও সিনামন গ্র্যান্ড জোটেলে। এসব হোটেলে অনেক বিদেশি পর্যটক ছিলেন। পরে বিকেলে আরো দুটি হামলার ঘটনা ঘটে।

এসএইচ-১৭/২৫/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)