জঙ্গিদের মরদেহ গ্রহণ করবে না লঙ্কান মুসলিমরা

শ্রীলঙ্কার ইমামদের প্রধান সংগঠন এসিজেইউ জানিয়েছে, দেশটির মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের মরদেহ গ্রহণ করবে না এবং মসজিদে তাদের দাফনের অনুমতি দেয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার কলম্বোয় এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা জানান, নিরাপরাধ সাধারণ মানুষের ওপর যারা এই নৃশংসতা চালিয়েছে, তারা আমাদের কেউ নয়।

সংবাদ সম্মেলনে এসিজেইউর নেতারা এই ভয়াবহ হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন যাতে দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হয় এবং তাদের সর্বোচ্চ কঠোর শাস্তি দেয়া হয়।

তারা এমন কথাও বলেছেন, যে ব্যক্তি এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল তার সন্দেহভাজন আচরণ সম্পর্কে বেশ কয়েক বছর আগে তারা দেশটির প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছিলেন।

শ্রীলঙ্কার কাত্তানকুডি শহরে দুই সন্তানের মা হাশিম মাদানিয়ার সঙ্গে যার ভাই জাহরান হাশিম এই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী দলের নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার গীর্জা ও হোটেলে রোববার নয়জন বোমা হামলাকারীর এই দলটির চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫০ জনের বেশি মানুষ।

তরুণী হাশিম মাদানিয়া বলেছেন, তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে তিনি স্তম্ভিত এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সামনে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত। পুলিশ তার সাক্ষাৎকার নিয়ে গেছে, যদিও তাকে সন্দেহভাজন হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে না।

কাত্তানকুডি ভারত মহাসাগরের উপকূলে শ্রীলঙ্কার মুসলমান অধ্যুষিত শহর- বাত্তিকালোয় শহরের কাছে এবং এই শহরের জনসংখ্যা ৫০ হাজারের কাছাকাছি।

আনবারাসান এথিরাজনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তারা ৫ ভাইবোন। তিনি সবার ছোট এবং হাশিম সবার বড়। তার বয়স ৪০-এর কোটায়।

তিনি বেশ জোর দিয়ে বলেছেন, ২০১৭ সালের পর থেকে ভাইয়ের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। সেসময় মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিন্ন আদর্শের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সহিংসতায় জড়িত থাকার কারণে পুলিশ যখন তাকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছিল তখন সে গা-ঢাকা দেয়।

রোববারের হামলার পর, একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে জাহরান হাশিম বলে যাকে মনে করা হচ্ছে সে আইএস গোষ্ঠীর নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির আনুগত্য স্বীকার করছে।

এই হামলার সঙ্গে জড়িত যে আটজন আইএস-এর অনুগত বলে গোষ্ঠীটি দাবি করেছে তাদের মধ্যে একমাত্র জাহরান হাশিমের মুখই ভিডিওতে দেখা গেছে।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ বলছে, হামলাকারী ছিল মোট নয়জন, যাদের মধ্যে একজন নারী এবং এরা সবাই শ্রীলঙ্কাতেই জঙ্গি হিসেবে বেড়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে এরা সবাই ‘শিক্ষিত’ এবং ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের।’ এদের একজন যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেছে।

হামলাকারীদের দু’জন দেশটির বিশিষ্ট এক মসলা ব্যবসায়ীর ছেলে। ওই ব্যবসায়ী এখন পুলিশ হেফাজতে। এদের একজনের স্ত্রী রোববারের হামলার পর পুলিশি অভিযানের সময় আত্মঘাতী হয়েছে। ওই বিস্ফোরণে তার দুই সন্তান এবং কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও মারা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ভাইয়ের কার্যকলাপের কথা আমি সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি। আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভাবতে পারিনি আমার ভাই এধরনের কাজ করতে পারে,’ বলেন মাদানিয়া।

‘আমি তার কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সে আমার ভাই হতে পারে। কিন্তু আমি এটা মেনে নিতে পারিনা। আমি তার কথা আর জানতেও চাই না।’

জাহরান হাশিম কয়েক বছর আগে উগ্রপন্থী ধর্মপ্রচারক হিসাবে স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিধর্মীদের নিন্দা করে বেশ কিছু ভিডিও পোস্ট করার পর তিনি স্থানীয় মহলে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

ওই ভিডিও এলাকার কিছু মুসলমানকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল, কারণ বৌদ্ধ-প্রধান শ্রীলঙ্কায় মুসলিমরা সংখ্যালঘু। স্থানীয় মুসলিম নেতারা বলছেন, তারা তাদের উদ্বেগের কথা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা আমলেই নেয়নি।

হাশিমের বোন জানান, মুসলিমদের একাংশের কাছে তার ভাই খুবই জনপ্রিয় ছিলেন তার কট্টরপন্থী মতাদর্শের কারণে। মূলধারার মুসলিম সংগঠনগুলো তার উগ্র মতাদর্শের কারণে হাশিমকে তাদের জমায়েতে কথা বলতে না দেয়ায় তিনি নিজেই কাত্তানকুডিতে ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত নামে সংগঠন গড়ে তোলেন।

সমুদ্রের ধারে একটা মসজিদও তৈরি করেন হাশিম। তার বিতর্কিত বিদ্বেষপূর্ণ বক্তৃতা সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসার পর ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। কিন্তু গোপন স্থান থেকে উস্কানিমূলক ভিডিও প্রকাশ অব্যাহত রেখেছিলেন। তার গড়ে তোলা সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল কি-না তা নিয়ে স্থানীয়রা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

শ্রীলঙ্কার উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এই সংগঠনটির নতুন একটি উপদল পরে তৈরি হয়েছিল। তবে, জাহরান হাশিম আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের একজন ছিল কি-না তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এসএইচ-১৮/২৬/১৯ (অান্তর্জাতিক ডেস্ক)