ব্রিটেন জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ইসলামি স্কুলগুলোর একটি নেটওয়ার্ক ছাত্রদেরকে অসহিষ্ণুতা ও নারী বিদ্বেষে উৎসাহিত করছে বলে সতর্ক করা হয়েছে ব্রিটিশ সরকারের একটি গোপন প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে ছড়িয়ে থাকা কয়েক ডজন দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে পাশ করা ইমামদের দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিম দেশগুলো থেকে যাওয়া চরম্পন্থি আলেমদের মতোই।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অন সানডে এরকম ৪৮টি মাদ্রাসা চিহ্নিত করেছে। ‘দারুল উলুম’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘জ্ঞানের ঘর’। এগুলোতে কঠোরভাবে ‘দার্স-এ-নিজামি’ নামের একটি পাঠ্যসূচি অনুসরণ করা হয়।
প্রতিবেদনে দাবী করা হয়, এই পাঠ্যসূচিতে কোরআনের শিক্ষা আক্ষরিক ভাবে অনুসরণ করা হয়। কট্টরপন্থী ইসলামি আন্দোলন ‘দেওবন্দিবাদ (Deobandism)’ এই শিক্ষা অনুসরণ করে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবানদের এধরনের ট্রেনিং স্কুলে তৈরি করা হয়েছিল।
আগে কমপক্ষে চারটি দারুল উলুম শিক্ষাকেন্দ্রের সমালোচনা করেছিল ব্রিটিশ শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অফস্টেড। পরিদর্শকরা জানতে পেরেছেন, এসব স্কুলের ছাত্রদেরকে শেখানো হচ্ছে যে নাচ-গান এসেছে শয়তানের কাছ থেকে এবং স্বামীদের সঙ্গে সঙ্গম প্রত্যাখ্যানের অধিকার মেয়েদের নেই।
সঙ্গীতের ওপর এদের নিষেধাজ্ঞা কথিত ইসলামিক স্টেটের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মতোই। সেখানে এই নিয়ম ভঙ্গ করা হলে জনসমক্ষে বেত্রাঘাত করা হতো।
প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা মেইল অনলাইনকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যভিত্তিক দারুল উলুমে দেয়া প্রশিক্ষণের ফলে চরমপন্থি তৈরি হচ্ছে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত রক্ষণশীল এবং আধুনিক ব্রিটেনে মুসলিমরা যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় সেগুলো তারা মোকাবেলায় ব্যর্থ। অর্থাৎ, ব্রিটেনে প্রশিক্ষিত ইমামরা ব্রিটিশ মুসলিমদের বিদেশি ইমামদের চেয়ে বেশি সহায়তা করতে সক্ষম নয়।’
গবেষণা সংস্থা কুইলিয়ামে কর্মরত চরমপন্থা বিরোধী বিশেষজ্ঞ হারাস রাফিক বলেন, ‘ব্রিটেনে প্রশিক্ষিত ইমামরা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রশিক্ষিত ইমামদের চেয়ে মোটেও ভাল নন। কারণ তারা উভয়ই দার্স-ই-নিজামি সিলেবাস অনুসরণ করে। দারুল উলুমগুলোর চরমপন্থার সমস্যা রয়েছে।’
এসব মাদ্রাসা লন্ডন, ম্যানচেস্টার, গ্লাসগো ও লাইসেস্টারসহ ব্রিটেনের অনেকগুলো শহরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু প্রতিবেদনে বার্মিংহামের দারুল উলুম হাই স্কুলকে ‘চরমপন্থি মাদ্রাসা’র উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
চার বছর আগে ‘নাচ-গান শয়তানের কাজ’ এমন বার্তা লেখা লিফলেট পাওয়া যাওয়ার পর ওই মাদ্রাসায় তদন্ত করে অফস্টেড। তাছাড়া, ব্রিটিশ গণমাধ্যম চ্যানেল ফোরের অনুসন্ধানে দেখা যায় এসব মাদ্রাসায় ছাত্রদেরকে ইহুদি, খৃষ্টান ও হিন্দুদেরকে ঘৃণা করতে শেখানো হচ্ছে।
এসএইচ-৩৪/০৬/১৯ (অান্তর্জাতিক ডেস্ক)