ভুয়া সংবাদ ও মিথ্যাচার ঠেকাতে সিঙ্গাপুরে আইন পাস

সিঙ্গাপুরের সংসদে বুধবার ‘অনলাইনে মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত কার্যক্রম প্রতিরোধ প্রস্তাব’ পাস হয়েছে। নতুন এ আইন নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশটিতে। কারণ আইনটি কার্যকর হলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ব্যক্তিগত চ্যাট গ্রুপের মতো জায়গাতেও হস্তক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ।

এছাড়া এ আইনের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বিষয় যদি সরকারের কাছে মিথ্যা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং যেগুলোতে ‘জনগণের আগ্রহ নেই’, সেগুলো সংশোধন করতে হবে অথবা মুছে ফেলতে হবে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, আইনটি জনসাধারণকে ‘ভুয়া’ সংবাদ দেয়া থেকে বিরত রাখবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটা বিরাট হুমকি।

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ আইন কার্যকর হবে। তবে এটি কীভাবে প্রয়োগ করা হবে সে ব্যাপারে এখনো পরিষ্কার করে কিছু বলেনি কর্তৃপক্ষ।

সিঙ্গাপুর সরকার জোর দিয়ে বলছে, এ আইন কারোর মতের ওপর প্রয়োগ করা হবে না। তবে যেসব ভুয়া সংবাদ বা মিথ্যাচারিতা দেশের কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেগুলোর ওপর এ আইন প্রয়োগ করা হবে।

দেশটির আইনমন্ত্রী কে সানমুগাম বলেন, এ আইন দ্বারা বাক স্বাধীনতায় ব্যাঘাত ঘটবে না। মিথ্যা, ট্রল ও ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করায় এ আইনের উদ্দেশ্য।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ আইনের মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ প্রচারের দায়ে অপরাধীর সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১ মিলিয়ন ডলার জরিমানা হতে পারে। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে নিউজ ওয়েবসাইটে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিস্তৃত পরিসরে এ আইন প্রয়োগ করা হবে। কেউ যদি আইন অমান্য করে তথ্য সংশোধন বা মুছে না ফেলে তাহলে তাদের শাস্তি দেয়া হবে।

নতুন এ আইনের সবচেয়ে বিতর্কিত দিকটি হলো, ব্যক্তিগত চ্যাট গ্রুপের (চ্যাট গ্রুপ, সামাজিক মাধ্যম গ্রুপ, যেখানে শুধু প্রেরক ও প্রাপক বার্তা দেখেতে পারেন) মতো জায়গাতেও পুলিশের নজর থাকবে। এবং সেখানে কোনো ধরনের ভুয়া বার্তা আদান-প্রদান করা হলে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে।

মঙ্গলবার দেশটির এক মন্ত্রী সংসদে বলেন, সামাজিক মাধ্যমের অ্যাপগুলোকে মিথ্যাচার ছড়ানোর ক্ষেত্রে আদর্শ প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে অনেকেই। কারণ তারা জনগণের মতামত থেকে দূরে থাকতে পারে। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, অনলাইনে মুহূর্তের মধ্যে একশ থেকে হাজার হাজার মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানো যায়।

সদ্য পাস হওয়া বিলে বলা আছে, সিঙ্গাপুরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে না। এছাড়া কোনো মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও ভুয়া বার্তা পাঠানো যাবে না।

দেশটির আইন বিভাগের সিনিয়র মন্ত্রী এডউইন টং বলেন, যে কোনো সমস্যায় সাধারণ সংশোধন আদেশ ইস্যু করতে পারে সিঙ্গাপুর। এমনকি কোনো তথ্য যদি মিথ্যা নাও হয়, সে ক্ষেত্রেও আদেশ ইস্যু করতে পারে।

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার সহকারী পরিচালক ফিল রবার্টসন ব্যক্তিগত চ্যাটে সিঙ্গাপুর সরকারের পুলিশের নজরদারির বিষয়টিকে ‘পাগলামি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশীপ প্রকল্পগুলো এখন বিগ ব্রাদার পদ্ধতিতে চলছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় হুমকি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলে, ব্যক্তিগত এবং পাবলিক বিষয়গুলোর মধ্যকার পার্থক্য সমাজের লোকেরা খুব সহজেই শনাক্ত করতে পারে।

মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের অবস্থান খুবই নাজুক। গত বছর রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারসে সাংবাদিকদের কর্মপরিবেশ এবং কাজের স্বাধীনতা নিয়ে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুরের অবস্থান ছিল ১৫১তম যা, রাশিয়া থেকে মাত্র তিন ধাপ নিচে।

এসএইচ-২৫/১০/১৯ (অান্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)