আমেরিকায় প্রবাসী সৌদি নাগরিক সাঈদ আল গামিদি নামের মুরসীর সাবেক এক প্রতিবেশী টুইটারে লিখেন, ডক্টর মুরসী আমার প্রতিবেশী ছিলেন। প্রতিদিন ফজরের আজানের আগেই স্ত্রীকে নিয়ে মসজিদে এসে মসজিদ পরিষ্কার করা ছিলো তার নিয়মিত অভ্যাস। তারা উভয়ে নিয়মিত মসজিদ-পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশগ্রহণ করতেন।
নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তেন। ফজর নামাজ পড়ে মসজিদ ত্যাগ করতেন মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসী। কোনোদিন যদি ওই মসজিদে আজান না হতো, তাহলে তার কথাই আমরা স্মরণ করতাম। তিনি তখন আজান দিতেন। পড়ালেখার সুবাদে বেশ কয়েকটি বছর মুরসী আমেরিকায় ছিলেন।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৫ সালে মিসরে ফেরার আগ পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন তিনি।
লসএঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সৌদি নাগরিক ড. মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ পড়াশোনার সময়ই মুরসীকে চিনতেন। টুইটারে তিনি লেখেন, হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ মুরসীর ওপর রহম করো। তাকে ক্ষমা করো।
তার ভুলগুলো মার্জনা করো। তিনি কতই না সুন্দর মানুষ এবং একজন সুপুরুষ ছিলেন। ড. মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আরো লিখেন, মুহাম্মাদ মুরসী রাজনীতিতে আসার আগেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়।
সেসময়ই তিনি কুরআনে কারিমের হাফেজ ছিলেন। মসজিদ দেখাশোনা করতেন। মসজিদ সংশ্লিষ্টদের খোঁজখবর রাখতেন। এমনকি তাকে নিয়মিত মসজিদ পরিষ্কার করতেও দেখেছি।
যেভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন মুরসি.
আদালতের এজলাসেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন মিসরের প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। মুরসি কারাগারে অকালে মারা যেতে পারেন বলে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা আগে থেকেই সতর্ক করেছিল।
কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে কারাবন্দি রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। মুরসির আগাম মৃত্যুর জন্য ক্ষমতাসীন আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিকেও দায়ী করেছিল যুক্তরাজ্যের বিশেষ স্বাধীন বন্দিত্ব পর্যালোচনা প্যানেল ইনডিপেনডেন্ট ডিটেনশান রিভিউ প্যানেল।
সোমবার আদালতে মুরসির মৃত্যর পর অনেক্ষণ মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রেখেছে সিসি প্রশাসন। সঠিক সময়ে মুরসির মৃত্যুর খবরওদেয়া হয়নি। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর ৬৭ বছর বয়সী সাবেক এ প্রেসিডেন্ট জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
এর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। অন্যদিকে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, আদালতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি পাচার মামলার শুনানি চলছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারকের কাছে কথা বলার অনুমতি চাইলে তাকে কথা বলতে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এ সময় ২০ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি।
বক্তব্যের মধ্যেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন মুরসি। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। এদিকে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
সোমবার মুরসির মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরদোগান বলেন, গাড়ি থেকে নামার সময় আমার কাছে মুরসির মৃত্যুর খবর আসে। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের শহীদ ভাইদের জন্য দোয়া করছি, আল্লাহ যেন শহীদদের ওপর রহম করেন।
এরদোগান বলেন, আদালতের এজলাসেই তার মৃত্যু হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি আল্লাহর কাছে রহমত কামনা করি।
এসএইচ-৩১/২১/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)