মিয়ানমার সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানোর দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লেইয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যেতে পারবেন না। রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আরো তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ এই চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অপর তিন কর্মকর্তা হলেন সেনাপ্রধান হ্লেইংয়ের সহযোগী সোয়ে ইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থ্যান ওও এবং অং অং।

এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে, মিয়ানমার সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সারা দেশেই এখনো মিয়ানমার সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়ন চালিয়ে আসছে।

২০১৭ সালে রাখাইনে জাতিগত নিধন অভিযানের সময় ইন দিন গ্রামে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় বেশ কয়েকজন সেনাসদস্যকে গ্রেফতার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত এক সেনাসদস্যকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী দায়ীদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিচ্ছে না মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই ঘটনাকে তার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। পম্পেও বলেছেন, এই অপরাধীদের মাত্র এক মাস বন্দি রাখার পর সেনাবাহিনীর প্রধান মুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু ইন দিন গ্রামের গণহত্যার ঘটনা বিশ্ববাসীকে জানানোর দায়ে দুই সাংবাদিককে ৫০০ দিনের বেশি কারাগারে কাটাতে হয়েছে।

২০১৭ সালে রয়টার্সের দুই প্রতিনিধি ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ইন গ্রামে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার খবর প্রথম প্রকাশ করেন। এই খবর প্রকাশের জেরে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ১৬ মাসের বেশি কারাবন্দি রাখা হয়। গত ৬ মে বহুল আলোচিত রয়টার্সের এই দুই প্রতিনিধি মুক্তি পান।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। জাতিসংঘ রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে জাতিগত নিধনে পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে চিহ্নিত করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছে মিয়ানমার।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের জেরে ওই বছরের ডিসেম্বরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পশ্চিমাঞ্চল রাখাইনের কমান্ড প্রধান মেজর জেনারেল মং মং সোয়ে মার্কিন ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েন। বছরের শেষ দিকে তাকে রাখাইন থেকে প্রত্যাহার করে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী।

এসএইচ-১৪/১৭/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)