কেমন ছিল হিটলার-ইভা ব্রাউনের সম্পর্ক?

পরিচয় না জেনেই প্রেমে পড়েছিলেন অ্যাডলফ হিটলারের। ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন কৈশোরেই। বিয়ে যদিও হয়েছিল। কিন্তু তার মেয়াদ ছিল এক দিনের একটু বেশি। এই ইভা ব্রাউনকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ ইতিহাসবিদরা। কিন্তু হিটলারের সঙ্গে কেমন ছিল তার সম্পর্ক? হিটলারের জীবনে কতটাই বা প্রভাব ছিল তার? জেনে নিন এক ঝলকে।

১৯১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে জন্ম ইভা ব্রাউনের। পুরো নাম ইভা অ্যানা পওলা ব্রাউন। বাবা ফ্রেডরিক ব্রাউন ছিলেন স্কুল শিক্ষক। বিয়ের আগে সেলাইয়ের কাজ করতেন ইভার মা। ১৯২২ সালে ইভার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও ফের একে অপরকে বিয়ে করেন তারা।

শোনা যায়, ছোট থেকেই সাজগোজ করতে ভালোবাসতেন ইভা। ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশাও শুরু করেন অল্প বয়সেই। তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তার মা-বাবা। মেয়েকে কনভেন্ট স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না ইভা। তিনি নিজেও তা জানতেন। তাই মা-বাবার কথা যাতে শুনতে না হয়, তখন থেকেই চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদনপত্র জমা দিতে শুরু করেন তিনি।

ছবি তোলার নেশা থাকায়, সেই সময় একটি স্টুডিওতে কাজ পেয়ে যান তিনি। আর তাতেই জীবন পাল্টে যায় তার।
যে স্টুডিও চাকরি পান ইভা, সেটি ছিল হিটলারের ব্যক্তিগত চিত্রগ্রাহক হাইনরিচ হফম্যানের। সেই সূত্রেই মাত্র ১৭ বছর বয়সে হিটলারের সঙ্গে আলাপ ইভার। হিটলার তখন ৪০। দু’জনের মধ্যে ২৩ বছরের ফারাক। তা সত্ত্বেও প্রথম দর্শনেই হিটলারকে মনে ধরে ইভার।

তুখোড় রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও, তখনও জার্মানির সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেননি হিটলার। তাই তার আসল পরিচয় জানতে পারেননি ইভা। হিটলারের আসল নামটুকু পর্যন্ত জানতেন না তিনি। ধীরে ধীরে সব কিছু জানতে পারলেও, রাজনীতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকায়, নাৎসি পার্টি এবং তাতে হিটলারের ভূমিকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না তিনি।

ইভার সঙ্গে আলাপের সময়ই সৎ বোন অ্যাঞ্জেলা রাউবলের মেয়ে গেলির সঙ্গে লিভ ইন করছিলেন হিটলার। হিটলারের জীবনে যত নারী এসেছেন, তাদের মধ্যে একমাত্র গেলিকেই তিনি ভালোবাসতেন বলে দাবি ইতিহাসবিদদের। কিন্তু ভিয়েনায় অন্য এক জনের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন গেলি। তা নিয়ে হিটলারের সঙ্গে ঝামেলার জেরে আত্মঘাতী হন তিনি।

গেলির মৃত্যুর পর একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন হিটলার। সেই সময়ই তার জীবনে প্রবেশ ইভার। ধীরে ধীরে হিটলারের বিভিন্ন পার্টিতে ইভার আনাগোনা শুরু হয়। হিটলারের বাড়িতেও যাতায়াত বাড়ে তার। কিন্তু কেউ এলে লুকিয়ে পড়তে হত তাকে। কখনও আবার ইভাকে নিজের সেক্রেটারি বলেও পরিচয় করাতেন হিটলার।

নিজের দেশপ্রেমী ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখা নিয়ে বরাবর সচেতন ছিলেন হিটলার। তাই অবিবাহিত এবং নারীসঙ্গ থেকে শতহস্ত দূরে বলে সাধারণ মানুষের সামনে নিজেকে তুলে ধরতেন তিনি। কিন্তু ইভা ছাড়াও সেই সময় আরও সাত-আটজনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন অভিনেত্রী রেনাতে মুলার।

হিটলারের প্রেমিকাদের সকলেই একবার না একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। রেনাতে মুলারও আত্মঘাতী হন। তাকে ছাড়াও বাইরে হিটলারের আরও প্রেমিকা রয়েছে বলে জানতেন ইভাও। হিটলারের নজর কাড়তে তাই তিনিও দু’-দু’বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তার পরই হিটলারের জীবনে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নেন ইভা।

শুরু থেকেই এই সম্পর্কের বিরোধী ছিল ইভার পরিবার। কিন্তু তা কানে তোলেননি ইভা। আবার যথেষ্ট সাবধানী ছিলেন হিটলারও। ইভার পরিবার ইহুদি কিনা, বা ইহুদিদের সঙ্গে তাদের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা জানতে গোয়েন্দা লাগিয়েছিলেন তিনি।

ইভা ব্রাউনের ডায়েরি থেকে জানা যায়, তাদের সম্পর্কে হিটলারই সব কিছু ঠিক করতেন। এমনকি কখন ঘনিষ্ঠ হবেন তাও নির্ভর করত নাৎসি প্রধানের মর্জির উপরই। ইভাকে মদ্যপান এবং ধূমপানও করতে দিতেন না হিটলার। জনসমক্ষে বেরনো, মানুষের সঙ্গে আলাপ এবং পার্টিতে নাচেরও অনুমতি ছিল না তার।

এত কিছু সত্ত্বেও হিটলারকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেননি ইভা। তাই মিত্রপক্ষ যখন জার্মানিতে ঢুকতে শুরু করেছে, নাৎসি নেতারা জার্মানি ছেড়ে পালাতে শুরু করলেও, হিটলারকে ছেড়ে যেতে রাজি হননি ইভা।

১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল মধ্যরাতে হাতে গোনা কয়েক জনের উপস্থিতিতে হিটলারের সঙ্গে রেজিস্ট্রি বিয়ে সারেন তিনি। তাতে সই করার সময় পদবী ব্রাউন লিখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইংরেজিতে ‘B’ লেখার পরও পরে তা কেটে হিটলার লেখেন।

এরপর ৩০ এপ্রিল দুপুরে ঘনিষ্ঠদের বিদায় জানান হিটলার ও ইভা। সেই দিনই দুপুর সাড়ে ৩টা নাগাদ সায়ানাইড খেয়ে প্রথমে আত্মঘাতী হন ইভা। তারপর নিজের মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হন হিটলারও। যাতে শত্রুপক্ষের হাতে না পড়েন, তাই হিটলার ঘনিষ্ঠরা দেহ দু’টি জ্বালিয়ে দেন। পরে যদিও তাদের দেহাংশ উদ্ধার করে গোপনে সমাধিস্থ করে সোভিয়েতরা।

এসএইচ-২০/১১৯/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)