সুষমা কন্যা বাঁশুরী বিজেপির রাজনীতিতে আসছেন?

বুধবার সুষমা স্বরাজের স্মরণসভা হয়েছে। সেখানে এক-একজনের মুখে মায়ের কথা শুনছেন, চোখ ফেটে জল বেরোচ্ছে। ৩৫ বছরের বাঁশুরী। বসেছিলেন ঠিক প্রধানমন্ত্রীর পাশে। অন্য দিকে বাবা স্বরাজ কৌশল।

দিল্লিতে সুষমা স্বরাজের স্মরণসভায় বাঁশুরীর কথা প্রথম তুললেন প্রধানমন্ত্রীই। বললেন, ‘বাঁশুরীর মধ্যে সুষমাজির প্রতিফলন দেখি। মায়ের প্রয়াণের পর পরিণত ভাবে নিজের বাবা, পরিবারকে সামলেছেন।’ স্বরাজের চোখেও তখন জল। আর সবার শেষে বলতে উঠে বাঁশুরী বললেন, ‘মা আমার সবথেকে বড় বন্ধু।’ এই ব্যক্তিগত সঙ্কটে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতাও জানালেন।

বক্তব্য শেষে বাঁশুরীর মাথায় হাত রাখলেন মোদী। উপস্থিত অনেকের প্রশ্ন, এ বার কি বিজেপিতে যাবেন সুষমা-কন্যা? স্মরণসভায় বাঁশুরীর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় সুষমার ছাপও দেখলেন অনেকে।

দীনেশ ত্রিবেদীকে স্মরণসভায় পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিএসপির সতীশ মিশ্র, কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা, ডিএমকের তিরুচি শিবা—বিরোধীদের ভিড়ই ছিল বেশি। সকলের মুখেই এক কথা, সুষমা ছিলেন মায়ের মতো, বোনের মতো, দিদির মতো, ভারতীয় নারীর রূপ তিনি। মোদী-অমিত শাহদের সামনে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা বলেন, ‘কাঁধ ছোট, কিন্তু ব্যক্তিত্ব বড়।

কখনও অহঙ্কার দেখিনি। অন্যকে ছোট করতে দেখিনি।’ রাজনাথ সিংহের কথায়, ‘শুধু জননেতা নন, জনমন-নেতা ছিলেন সুষমা।’ শিবসেনার নেতাও বললেন, ‘বালাসাহেবের লাডলি।’ আরএসএসের নেতা কৃষ্ণগোপালও স্মরণ করেন, ‘একসময় সংসদে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় যখন ‘সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রূবাদ’ নিয়ে বিতর্ক করছিলেন, সুষমা বলেন, এক বাঙালি পরিবারের ছেলের নাম সোমনাথই ‘সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদ’।’

বিজেপি আয়োজিত স্মরণসভায় অনেকেই বলাবলি করছিলেন, গত পাঁচ বছরে সুষমাকে যোগ্যতা অনুসারে ব্যবহার করাই হয়নি। সে কারণেই হয়তো তিনি আর ভোটে লড়েননি। এমন চর্চার কথা অজানা নয় বলেই মোদী নিজের বক্তৃতায় আগেই বলেছিলেন, ‘চাপ আসবে জেনেই হয়তো সুষমাজি ভোটে না লড়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর ঘোষণার পর আমি আর বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেছিলাম, আপনি ভোটে দাঁড়ান। বাকি চিন্তা করবেন না।

কিন্তু তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।’ এ-ও বলেন, ‘যে বিদেশ মন্ত্রক শুধু প্রোটোকল, কোট-প্যান্ট-টাই-এ আবদ্ধ থাকে, তার পরিভাষাও বদলে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপুঞ্জে যখন নিজের মন থেকে বক্তৃতা দেওয়ার কথা বলি, অকপটে বলেছিলেন —এ ভাবে হয় না ভাই। আপনি ভাল বক্তা হতে পারেন। কিন্তু এক-এক মঞ্চের এক নিয়ম আছে। সত্যি কথা অকপটে বলতে পারতেন তিনি।’

মৃত্যুর আগে শেষ টুইটটি সুষমা করেন ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে। ফের বাঁশুরীর উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘বাঁশুরীই আমাকে বললেন, এত খুশি ছিলেন তিনি। ভিতরে হয়তো খুব উৎসাহ পেয়েছিলেন। এখন শ্রীকৃষ্ণের চরণে পৌঁছে গেলেন।’

হঠাৎ আলোচনায় আসা বাঁশুরীর মায়ের মতোই আইনজীবী হয়ে পথ চলা শুরু। তাঁর মধ্যে অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেন সদ্যপ্রয়াত নেত্রীকে। তিনি কি পারবেন মায়ের রেখে যাওয়া ব্যাটন হাতে তুলে নিয়ে এগতে? সে দিকে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিময়ী বাঁশুরী স্বরাজ। সদ্যপ্রয়াত ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একমাত্র কন্যা।

১৯৭৫ সালের ১৩ জুলাই জরুরি অবস্থার মধ্যেই বিয়ে করেন সুষমা ও স্বরাজ কৌশল। ১৯৮৪-তে জন্ম তাঁদের একমাত্র সন্তান বাঁশুরী। বিয়ের পর থেকে সুষমা তাঁর স্বামীর পদবী ‘কৌশল’-এর পরিবর্তে নাম ‘স্বরাজ’-কেই নিজের নামের পাশে ব্যবহার করতেন। মায়ের মতো বাঁশুরীও ‘স্বরাজ’ পদবীই ব্যবহার করেন।

রাজনীতিকের পাশাপাশি সুষমা ছিলেন একজন আইনজীবীও। তাঁর স্বামী স্বরাজ কৌশলও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। পাশাপাশি, তিনি দেশের কনিষ্ঠতম অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি ভারতের অ্যাডভোকেট জেনারেল হয়েছিলেন। তাঁদের পথেই পা রেখেছেন কন্যা বাঁশুরী। তিনি একজন ক্রিমিনাল ল’ইয়ার।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বাঁশুরী ব্যারিস্টার ডিগ্রি লাভ করেছেন লন্ডনের ইনার টেম্পল থেকে। বর্তমানে তিনি অ্যাডভোকেট হিসেবে দিল্লি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করেন।

হাই প্রোফাইল বাবা-মায়ের মেয়ে হয়েও বাঁশুরী বিশেষ শিরোনামে আসেননি কোনও দিনই। বরাবর লো প্রোফাইল বজায় রাখতেন। একবারই জড়িয়ে পড়েছিলেন বিতর্কে। আইপিএল চলার সময়ে ললিত মোদী বিতর্কে উঠে এসেছিল বাঁশুরীর নাম। তিনি ললিত মোদীর লিগাল টিমের সদস্য ছিলেন।

একবার মেয়ের জন্য টুইটারে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুষমা স্বয়ং। এক নেটিজেন টুইটারে অভিযোগ করেছিলেন, সুষমা অন্যায় ভাবে নর্থ ইস্ট কোটায় মেয়েকে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাইয়ে দিয়েছেন। কড়া জবাবে সুষমা জানিয়েছিলেন, তাঁর মেয়ে অক্সফোর্ড-গ্র্যাজুয়েট এবং একজন আইনজীবী।

গত ৬ অগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সুষমার। শেষ মুহূর্তে তাঁর পাশে ছিলেন বাঁশুরী। তিনিই মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।

সম্প্রতি সুষমার স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাঁশুরীর মধ্যে সুষমা স্বরাজের প্রতিফলন দেখার কথা জানান। তার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে উঠতে শুরু করেছে একটি প্রশ্ন। তা হলে কি এ বার বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন সুষমাকন্যা? এখনও অবধি স্বরাজ পরিবার বা বিজেপি, কোনও পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

এসএইচ-১৫/১৫/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র: আনন্দবাজার)