যেসব কারণে কাশ্মীরে গণহত্যার আশঙ্কা

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও দেশটির আসাম প্রদেশে গণহত্যা হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন জেনোসাইড ওয়াচ। সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বলছে, কাশ্মীরে গণহত্যা সংক্রান্ত দশটি লক্ষণ এখন স্পষ্ট।

জেনোসাইড ওয়াচ মূলত গণহত্যা রোধে কাজ করে থাকে। তারা সামগ্রিক অনুঘটন বিশ্লেষণ করে গণহত্যা হতে পারে কি না তার অনুমান ও তা রোধ, বন্ধসহ দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে তৎপরতা চালায়। গণহত্যা প্রতিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওই সংস্থাটি আশঙ্কা করছে, কাশ্মীর ও আসামে গণহত্যা হতে পারে।

সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই সতর্কবার্তায় গণহত্যার লক্ষণ হিসেবে দশটি বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে। তারা বলছে, কাশ্মীরের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে করে নিকট ভবিষ্যতে যেকোনো সময় ওই দুই অঞ্চলে গণহত্যা চলানো হবে।

কাশ্মীরে গণহত্যা সংক্রান্ত জেনোসাইড ওয়াচের দশ লক্ষণ

শ্রেণীকরণ : প্রথম লক্ষণটি হলো অপরায়নের রাজনীতি। হিন্দু ও শিখ নিয়ে গঠিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘আমরা’ বনাম কাশ্মীরের সাধারণ মুসলিমকে ‘তারা’ বলে চিহ্নিত করা। এই দুই ভাগের কারণে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে।

ভিন্ন পরিচয় নির্মাণ : গণহত্যা হওয়ার জন্য দ্বিতীয় যে পর্যায়টি সেটি হলো ভিন্ন পরিচয় নির্মাণ। কাশ্মীরের মুসলিমদের নামগুলো মুসলিম (পরিচয়পত্রে), তাদের আলাদা ভাষা এবং পোশাক রয়েছে। এ ছাড়া তাদের ধর্ম পালনের স্থান হলো মসজিদ।

বৈষম্য : ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরে অর্থনৈতিকভাবে আধিপত্য ছিল হিন্দু পন্ডিতদের। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি হিন্দুদেরকে সেই ক্ষমতা পুনুরুদ্ধার করে দিয়েছে।

অমানবিকতা : কাশ্মীরের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দেশটির সরকার থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদেও আরও কিছু পরিচয় হলো বিচ্ছিন্নতাবাদী, অপরাধী এবং সবচেয়ে বড় নেতিবাচক যে পরিচয় তা হলো ‘জঙ্গি’।

সংগঠন (সামরিক) : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ দেশটির প্রায় ৬ লাখ সেনাসদস্য সেখানে মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া তাদের মধ্যে সশস্ত্র পুলিশ রয়েছে।

মেরুকরণ : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপি দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষী ঘৃণা তৈরির কাজটি সুকৌশলে করে যাচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

প্রস্তুতি : গোটা কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। যেকোনো মূল্যে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নেয়াকে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ হিসেবে দেখছে বিজেপি নেতারা।

নিপীড়ন : কাশ্মীরের মুসলিমদের খাঁচাবন্দী তথা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে কোনো কারণ ছাড়াই মেরে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রেফতার, ধর্ষণ এবং নির্যাতন তো অহরহই ঘটছে সেখানে।

বিধ্বংস : ১৯৯০ সাল থেকে সেখানে ২৫টি হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেসব হত্যাকাণ্ডে ২৫ জনেরও বেশি মুসলিম যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

অস্বীকার : কাশ্মীরের ‘ অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূ ‘ করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য বলে দাবি করছে নরেন্দ্র মোদি ও তার কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। তারা কোনো হত্যার কথা স্বীকার করে না। তাদের দাবি, সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ কেউই নির্যাতন, ধর্ষণ অথবা হত্যার চেষ্টাও করেনি।

গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে মোদি সরকার। ফলে কাশ্মীর এখন কেন্দ্র সরকারের সম্পূর্ণ ও সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কিন্তু বেশ কিছু স্বায়ত্বশাসনের শর্তে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কাশ্মীর।

এসএইচ-১৫/২৩/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)