পাক-ভারত পরমাণু যুদ্ধে মরবে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ

পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যদি পারমাণবিক যুদ্ধ হয় তাহলে এতে অন্তত সাড়ে ১২ কোটি (১২৫ মিলিয়ন) মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালান রোবকের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত তার এই গবেষণার বরাত দিয়ে এমন ভয়াবহ প্রাণহানির খবর দিয়েছে মার্কিন দৈনিক ইউএসএ ট্যুডে।

এতে বলা হয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ হলে ১২৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে; যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছয় বছরে যে প্রাণহানি ঘটেছে তার চেয়ে বেশি। অধ্যাপক অ্যালান রোবক বলেছেন, ‘এ ধরনের যুদ্ধ হলে শুধুমাত্র টার্গেট এলাকায় বোমা হামলার আশঙ্কা থাকবে না, বরং পুরো বিশ্বই আক্রান্ত হতে পারে।’

বিস্ফোরণের কয়েক সপ্তাহ কিংবা মাসের পর বৈশ্বিক জলবায়ু বিপর্যয় নেমে আসবে। এর ফলে এই গ্রহে খাদ্য-শস্যের উৎপাদনে ধস নামবে; যা গণঅনাহারের কারণ হবে।

কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডল বিষয়ক বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক ব্রায়ান টুন বলেছেন, এটি এমন এক ধরনের যুদ্ধ হবে; যা মানুষ অতীতে দেখেনি। মার্কিন এই বিজ্ঞানী কয়েক দশক ধরে পারমাণবিক যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করে আসছেন।

পারমাণকি যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা এই বিজ্ঞানী ১৯৮০ সালে ‘পারমাণবিক শীতকাল’ নামে একটি টার্ম ব্যবহার করেন। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে পারমাণবিক যুদ্ধ হলে যা চরম শীত বয়ে আনতে পারে; এই শীতকালীন পরিস্থিতিকে বোঝানোর জন্য ‘পারমাণবিক শীতকাল’ টার্ম ব্যবহার করেন ব্রায়ান টুন।

কম্পিউটার সিমিউলেশন ব্যবহার করে এই বিজ্ঞানীরা পাক-ভারত পারমাণবিক যুদ্ধের একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এ দুই দেশের জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। কাশ্মীরি ভূখণ্ডকে উভয় দেশই নিজেদের বলে দাবি করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের হাতে ৩০০ পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেও ২০২৫ সালে সেই অস্ত্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০০ থেকে ৫০০টি।

এই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি অস্ত্রের বিস্ফোরণে প্রাণ যাবে ৭ লাখেরও বেশি মানুষের। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট আগুন থেকে ৩ কোটি ৬০ লাখ টনের বেশি কালো কার্বন নিঃস্বরণ হবে। যা বায়ুমণ্ডলের উপরে চলে যাবে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

এর ফলে বিশ্বের অনেক অংশে সূর্যের আলো কোনোভাবেই পৌঁছাবে না। কারণ ওই কালো কার্বনের স্তর ভেদ করে সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে পারবে না। শুধু তাই নয়, ভূপৃষ্ঠকে শীতল করবে প্রায় ৯ ডিগ্রি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাবে ৩০ শতাংশ। যে কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খাদ্য সঙ্কট ও গণঅনাহারের হুমকি তৈরি হবে।শীতলতা এমন পর্যায়ে নেমে আসবে; যা গত বরফ যুগের পর আর কখনোই দেখা যায়নি।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি সায়েন্স জার্নালের উপ-সম্পাদক কিপ হজেস একটি সম্পাদকীয় লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, স্নায়ুযুদ্ধের আড়ালে মাত্র কয়েকটি দেশ একটি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করতে পারে। এমন ৯টি দেশের হাতে এই মুহূর্তে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে প্রায় ১৪ হাজার।

হজেস বলেছেন, ‘এই যুদ্ধের কথা যখন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে আসে; তখন দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি এ দুই দেশের সঙ্গে ঝুঁকিতে জড়িয়ে যায় প্রায় পুরো বিশ্বই।’

রোবক বলেছেন, যেকোনো ধরনের যৌক্তিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে না। তবে দুর্ঘটনাবশত অথবা হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে অথবা আতঙ্কিত হয়ে বিশ্ব নেতারা এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঠেকানোর একমাত্র উপায় এই অস্ত্র ধ্বংস করে ফেলা।

টুন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, পাকিস্তান এবং ভারত আমাদের এই গবেষণার নোট নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু অধিকাংশের মতো আমিও উদ্বিগ্ন যে, পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহ ফলাফলের ব্যাপারে মার্কিনিরা অবগত নয়।

এসএইচ-১১/০৩/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র : ইউএসট্যুডে)