টুইন টাওয়ারে হামলার পর সোয়া তিন কোটি মুসলমানের প্রাণহানি!

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর সারাবিশ্বে প্রায় সোয়া তিন কোটি মুসলমানের প্রাণহানি ঘটেছে বলে পার্স টুডের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে। নিবন্ধটি লিখেছেন রেডিও তেহরানের সিনিয়র সাংবাদিক ড. সোহেল আহম্মেদ।

নিবন্ধের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো

এড়ানোযোগ্য মৃত্যু নিয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা করছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত অধ্যাপক গিডেয়ন পোলিয়া। তিনি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন, ৯/১১-পরবর্তী বিভিন্ন যুদ্ধে প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন।

তিনি দেখিয়েছেন, সরাসরি যুদ্ধ ও এর প্রভাবে দুই কোটি ৭০ লাখ মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন। এর সঙ্গে তিনি আরও ৫০ লাখ মুসলমানকে যোগ করেছেন। কারণ তার গবেষণায় দেখানো হয়েছে, যুদ্ধে যেসব মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন তারা বেঁচে থাকলে তাদের ঔরসে জন্ম নিতেন এই ৫০ লাখ মুসলমান।

এদিকে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইয়েমেনে কেবল সরাসরি যুদ্ধে যারা নিহত হচ্ছেন তাদের একটা পরিসংখ্যান নিয়মিত তুলে ধরছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট।

সম্প্রতি সংস্থাটির প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯/১১-এর পর এই পাঁচ মুসলিম দেশে সরাসরি যুদ্ধে মারা গেছেন আট লাখের বেশি মানুষ। এছাড়া সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন আরও দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ।

তবে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যানে যুদ্ধের প্রভাবে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা তুলে ধরা হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা হলো সরাসরি যুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যায় যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও মহামারিসহ নানা জটিলতায়।

নিবন্ধে বলা হয়, গত দুই দশকের যুদ্ধ ও এর প্রভাবে বিশাল সংখ্যক মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন এবং একই কারণে এখনও প্রতি মুহূর্তেই অকালে বহু মুসলমানের প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন দেশে জঙ্গি হামলায় নিহত মুসলমানদের যোগ করা হলে সংখ্যাটা আরও অনেক বড় হবে। গত দুই দশকের জঙ্গি হামলায় হতাহতদের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই মুসলমান এবং মুসলিম অধ্যুষিত দেশেই বেশির ভাগ হামলা হচ্ছে।

সাংবাদিক সোহেল আহম্মেদ আরও লিখেছেন, মুসলমানদের এই প্রাণহানি একটা পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞেরই অংশ। বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী শক্তি সুচারুভাবে মুসলিমনিধনের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে একটি অঘোষিত সমঝোতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে কয়েকটি ধাপে এ নিধনযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।

প্রথমে সরাসরি সামরিক হামলা চালানো হচ্ছে, এরপর ইসলামের নাম দিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরি করে তাদের দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে এবং পরবর্তীতে এই জঙ্গিদেরও ধ্বংস করা হচ্ছে আইন ও বিচারের আওতায় এনে অথবা ভিন্নমতের জঙ্গিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে দিয়ে। কারণ তারাও মুসলমান। এখানে মুসলমাননিধনই বড় কথা। ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের গত কয়েক বছরের ঘটনাবলিই এর প্রমাণ।

ইসরাইল যে ফিলিস্তিনিদের ভিটেবাড়ি দখল করে এখন তাদের ওপরই জুলুম-নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তা বিশ্বের প্রায় সব মহলেই স্বীকৃত। কিন্তু ইসলামের নামে যেসব জঙ্গিগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে তারা এ বিষয়ে সবসময় নিশ্চুপ। দখলদার ইসরাইলের প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছিল এসব গোষ্ঠী। কিন্তু কখনোই তারা ফিলিস্তিনি হত্যার প্রতিবাদে ইসরাইলে হামলাতো দূরের কথা কোনো ধরনের উচ্চবাচ্যও করেনি।

যদিও সিরিয়ায় নির্বিচারে মুসলিম হত্যা ঠিকই চলেছে। এসব জঙ্গিগোষ্ঠীর অনেক সদস্য ইসরাইলি বাহিনীর কাছ থেকে চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সহযোগিতা নিয়েছে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এবং কোনো কোনো জঙ্গি নেতা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নেয়ার কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন।

নিবন্ধের শেষে তিনি লিখেছেন, ইসলাম ধর্ম এসেছে বিশ্বেশান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য। ইসলাম ধর্মের রাজনৈতিক দর্শন ও কাঠামো রয়েছে। কোনো তৎপরতার চূড়ান্ত পরিণতি যদি অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা হয় তাহলে ইসলাম ধর্ম তা সমর্থন করে না। এ অবস্থায় শত্রুদের ফাঁদ থেকে বাঁচতে বিশ্বের মুসলমানদের এখন ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের কাজে সময় দিতে হবে। ইসলামবিরোধী আস্তিক ও নাস্তিক মানুষগুলোর সামনে ইসলাম ধর্মের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে।

এসএইচ-১৩/০৬/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)