বিশ্বের নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র বোগেইনভিলে?

পাপুয়া নিউ গিনি (পিএনজি) থেকে বিচ্ছিন্ন হতে স্বাধীনতার পক্ষে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বোগেইনভিলে দ্বীপ। গণভোটের ফলাফলে বিশ্বের নবীন স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে সাধারণ জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন; যা দ্বীপটির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুধবার বোগেইনভিলে গণভোট কমিশনের চেয়ারম্যান বার্টি আহারন নির্বাচনী ফল ঘোষণা করেছেন। এতে দেখা গেছে, এই দ্বীপের ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৭ ভোটারের মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোটার। অন্যদিকে, অধিক স্বায়ত্তশাসন নিয়ে পাপুয়া নিউ গিনির সঙ্গে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৪৩ জন ভোটার।

বোগেইনভিলের স্বাধীনতার জন্য গণভোটের এই ফলাফল এখন পাপুয়া নিউ গিনির জাতীয় সংসদে পাস হতে হবে। তবে সংসদে গণভোটের এই ফলাফল পাস হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু গণভোটের ফলাফল পাপুয়া নিউ গিনি কর্তৃপক্ষের ওপর বোগেইনভিলেকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চাপ সৃষ্টি করবে।

ঐতিহাসিক এই গণভোট বোগেইনভিলের বিদ্রোহী যোদ্ধা, পাপুয়া নিউ গিনির সরকারি বাহিনী ও বিদেশি যোদ্ধাদের সংঘাত সংঘর্ষের পর ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তির অংশ। এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশটিতে ত্রিমুখী এই সংঘাতে দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ অর্থাৎ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৯৮ সালে এই সংঘাতের অবসানের পর ২০০১ সালে ওই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বোগেইনভিলের বুকা দ্বীপে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গণভোট কমিশনের চেয়ারম্যান বার্টি আহারন সব পক্ষকে নির্বাচনী ফলাফল মেনে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই ভোট আপনার শান্তি, আপনার ইতিহাস এবং আপনার ভবিষ্যৎ। অস্ত্রের চেয়ে যে কলম শক্তিশালী সেটা এই ভোট দেখিয়েছে। গন্তব্যের উদ্দেশে চলমান যাত্রার একটি অংশ এই গণভোট।

গত ২৩ নভেম্বর বোগেইনভিলের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এই দ্বীপজুড়ে বোগেইনভিলের পতাকা হাতে হাজারও মানুষ ভোটকেন্দ্রে যান এবং স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।

বোগেইনভিলেতে সংঘাত শুরু হয় ১৯৮০ সালের শেষর দিকে। এই সময় দ্বীপের পানগুনা এলাকায় বিশালাকারের একটি তামার খনি ঘিরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এই খনি থেকে উত্তোলিত তামার বৃহৎ একটি অংশ রফতানি করে পাপুয়া নিউ গিনি। কিন্তু বোগেইনভিলের অনেকেই মনে করেন এই রফতানি আয়ের কোনো সুবিধাই তারা পান না। সুবিধা না পেলেও খনির উত্তোলন কাজ তাদের প্রথাগত সংস্কৃতি ও নাগরিক জীবন-যাপনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ওই সংঘাতের পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে খনিটি। অনেকেই মনে করেন, এই খনি বোগেইভিলের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে। যে কারণে তারা দ্বীপটির স্বাধীনতা চান।

এসএইচ-২০/১১/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)