উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আসাম, কারফিউ জারি

নাগরিক সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আসাম ও ত্রিপুরা। ভারতের সংসদে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির উত্থাপিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে সাধারণ মানুষ।

সোমবার সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি উত্থাপন করেন। ক্ষমতাসীন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাসে কোনো বেগ পেতে হয়নি তাদের। বুধবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি (সিএবি) পেশ করা হয়। সেখানেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিলটি।

এদিকে আসামের গুয়াহাটি এলাকায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। এছাড়া বুধবার থেকে আসামের ১০ জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বাতিল করা হয়েছে।

নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নেয়া লোকজনের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর বিভিন্ন এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়। আসাম অধিগ্রহণ ১৯৮৫ এর প্রতিবাদে ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গুয়াহাটি বিমানবন্দরে আটকা পড়েন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল।

মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল যখন আটকা পড়েন ঠিক সে সময়ই রাজ্যসভায় বিতর্ক চলছিল নাগরিকত্ব বিল নিয়ে।

বুধবার বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শহ বলেন, তিনি উত্তর-পূর্বের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এই বিল পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে না। সে কারণেই তিনি প্রতিবাদকারীদের ওই বিক্ষোভ-আন্দোলন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

আসাম ও ত্রিপুরায় ৫ হাজার সেনা পাঠানো হয়েছে। বিক্ষোভ সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছে সেনাবাহিনীর সদর দফতর। সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, ‘ইতোমধ্যে সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। তারা পুলিশ ও প্রশাসনকে সহায়তা করবে। শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী ওইসব এলাকায় ফ্ল্যাগ মার্চ করবে।’

এদিকে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ করেছেন আসামের সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে গুয়াহাটির লতাশিল ময়দানে মানুষের সমাবেশ ছিল।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, বিক্ষোভ থামাতে আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। টুইট করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। তাতেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে বিক্ষোভ থামানো গেল না আসামে। বরং কারফিউ ভেঙেই এবার রাজ্যের গুয়াহাটির রাস্তায় নেমে এলেন সাধারণ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চলছে স্লোগানও।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বুধবারই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আসাম। কোনো সংগঠন ছাড়া সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তবে এ দিন আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানিয়েছেন তারা।
এদিন আসুর পক্ষ থেকেএকটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়ও গুয়াহাটির লতাশিল ময়দানে মানুষের সমাবেশ চলছে। এজন্য সকলকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আর্জি জানাচ্ছি আমরা।’’

এমন পরিস্থিতিতে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা, গো এয়ার-সহ বেশ কিছু সংস্থা আসাম বিমানবন্দর থেকে তাদের একাধিক বিমানের উড়ান বাতিল করেছে। বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু বিমানের অবনমনও।

এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার উত্তর-পূর্ব শাখার একজিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জীব জিন্দল বলেন, ‘‘ডিব্রুগড়ে ৯টি বিমানের উড্ডায়ন বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোনও ট্যাক্সিও পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে বুধবার যারা বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন, তারা এখনও আটকে আছে।’

এসএইচ-১৫/১২/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)