প্রশ্নের মুখে ভারত উন্নত

সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে ২০১৮ সালের ভারতে অপরাধ বিষয়ে একটি পরিসংখ্যান৷ এরপর থেকেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে, কত দূর এগোলো বা পেছাল ভারত?

দেশের জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান সংস্থা বা এনসিআরবির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে ভারতে দিনে ৯১টি ধর্ষণ হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যান বলছে দিনে ৮০টি খুন ও ২৮৯টি গুম হয়েছে৷

এই তথ্য প্রকাশের পর থেকে নতুন করে আলোচিত হচ্ছে ভারতের উন্নয়নশীলতার বাস্তবিক চিত্র৷

বর্তমানে, ভারতে বিশালাকারে সংগঠিত হচ্ছে নাগরকিত্ব আইন, নাগরিকপঞ্জীসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিক প্রতিবাদ৷ অন্যদিকে, প্রতিবাদী জনতার ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ থেকে পিছিয়ে নেই সমাজের কোনো অংশের মানুষ৷

একদিকে সংবিধানবিরোধী আইন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার সাধারণ মানুষ তেকে বলিউড সেলিব্রিটি সবাই, অন্যদিকে নতুন উদ্যমে প্রতিবাদ ঠেকাতে ‘ট্রল ব্রিগেড’৷ সব মিলিয়ে, কোথাও যেন অদৃশ্য এক ‘টাগ অফ ওয়ারে’ ব্যস্ত বর্তমান ভারত৷ পাল্লার একদিকে যুক্তি, প্রতিবাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ অন্যদিকে অন্ধ ভক্তি ও চুপ করিয়ে রাখার সংস্কৃতি৷

এমন পরিস্থিতিতে যখন ২০১৮ সালের অপরাধ পরিসংখ্যান সামনে আসে, তখন বুঝতে হবে যে ভারত গত দশ বছরে একাধিক ক্ষেত্রে উন্নতি করলেও বেশ কিছু মৌলিক খাতে রয়ে গেছে বিশাল ঘাটতি৷

প্রশ্ন করতে হবে, আসলেই কোথায় আটকে যাচ্ছে ভারত?

‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’

সমাজতাত্ত্বিক ক্যাথরিন ক্লেমেন্টিন-ওঝা একটি প্রতিবেদনে ভারতের মধ্যে অন্তর্নিহিত বেশ কিছু সামাজিক দ্বিমুখীতার প্রসঙ্গ তুলেচিলেন৷ তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক ইতিহাসের ভারত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ ইন্ডিয়া আসলে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর দুটি দেশ হতে পারতো৷ কিন্তু ঘটনাচক্রে এই দুটি একই ভৌগোলিক অবস্থানে, একই জনগোষ্ঠীর অঙ্গ৷

যেন দুটি একেবারে ভিন্ন দেশ, কিন্তু এগিয়ে চলছে একই সীমান্তের ভেতরে একই নাগরিকের দল নিয়ে৷

বর্তমান ভারতের সমস্ত টানাপোড়েন, তা হোক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক, সবই ঘুরেফিরে কোথাও যেন ক্যাথরিনের এই দ্বিমুখীতার কথাই মনে করায়৷

একই দেশে একদিকে একটি বিশেষ প্রাণীর মাংস খাওয়ার গুজবের ভিত্তিতে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয় পিতা-পুত্রকে৷ অন্যদিকে, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী সশরীরে সরকারবিরোধী জনসভায় উপস্থিত হয়ন, নিজের কেরিয়ার বা প্রাণভয়ের তোয়াক্কা না করেই৷

একই দেশে সম্প্রতি বৈধ হয়েছে সমকামী সম্পর্ক৷ অন্যদিকে এই ভারতেই ধর্ষিত হচ্ছেন গড়ে দিনে ৯১জন৷

জাতপাতভিত্তিক বিভেদ আইনত ভারতে অপরাধ হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে একজন রোহিত ভেমূলাকে আত্মহত্যা করতে হয়৷

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে সমস্যার মূলে রয়েছে এই অঞ্চলে প্রচলিত প্রাচীন আচারের অভ্যাসের সাথে আধুনিক গণতন্ত্রচর্চার সরাসরি সংঘর্ষ, যা প্রতিদিন খোলা চোখে দেখছে ভারতবাসী ও গোটা বিশ্ব৷

তর্ক চলবেই, কোন পথে এই দ্বন্দ্বের সমাধান৷ কিন্তু এখনও কোনো মধ্যপন্থায় এসে পৌঁছাতে পারেনি ভারত৷ খাতায় কলমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র হলেও ভারতে তা একটি উন্নয়নশীল চিন্তার নাম, যা এখনও ডান হাতে ভাত খাওয়ার মতো দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়নি৷

এসএইচ-১২/১৩/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)