নির্ভয়ার ধর্ষকের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ রাষ্ট্রপতির

ভারতের আলোচিত নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। আজ শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি নাকচ করা হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ফাঁসির দড়ি এড়াতে এটাই ছিল মুকেশ সিংয়ের শেষ সুযোগ। এর আগে মুকেশ ও আরেক আসামি বিনয় শর্মার করা সাজা মওকুফের আবেদন বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্ট।

গত সপ্তাহে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিলেন, নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে দোষী বিনয় শর্মা, মুকেশ সিং, অক্ষয় কুমার সিং এবং পবন গুপ্তকে আগামী ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তিহার কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির চলন্ত বাসে এক মেডিকেল ছাত্রীকে নির্যাতন, গণধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনার সাত বছর পর তাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।

তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্ধারিত সময়ের মাত্র পাঁচদিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন তারিখের আবেদন করেছে তিহার কারাগার কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, সবার প্রাণভিক্ষার আবেদন মীমাংসা হওয়ার পরেই সাজা কার্যকর করা যাবে।

শুক্রবার মুকেশের প্রাণভিক্ষার বিষয়টি মিটে গেলেও এখনো তিন আসামির আবেদনের সুযোগ আছে। এই আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে অন্তত ১৪ দিনের নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে ভারতের আইনে।

এদিকে, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আরও বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্ভয়ার মা। মেয়ের ওপর হওয়া অমানসিক নির্যাতনের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাদের (আসামি) যদি অধিকার থাকে, সাত বছর আগে হত্যার শিকার হওয়া মেয়ের জন্য আমাদেরও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।’

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে ফিরছিলেন প্যারামেডিক্যালের ওই ছাত্রী। যাত্রী কম থাকায় বাসের চালক-সহকারীসহ অন্তত ছয়জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রাখে। মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। পরে দু’জনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।

আহতাবস্থায় দেশটির সরকার মেডিক্যালের এই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায়। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকে।

নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এই তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।

২০১৩ সালে দেশটির দ্রুত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করে। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখে।

এসএইচ-১৬/১৭/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)