স্কুলে মিশেলের পুষ্টিনীতি বদলে দিচ্ছেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে শিশুদের সকালে বা দুপুরের খাবারে বেশিরভাগ ফলমূল ও শাকসবজি দেয়ার নিয়ম চালু করেছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। তবে শুক্রবার তার ৫৬তম জন্মদিনেই সেই নীতি বদলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন নিয়মে ফলমূল-শাকসবজি কমিয়ে এর বদলে বেশি করে পিজ্জা-বার্গারের মতো ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) সেখানকার খাদ্য ও পুষ্টি সেবার বিষয়টি দেখাশোনা করে। তারা জানিয়েছে, খাদ্যসেবা সহজ করা ও অপচয় কমাতে এই নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে। এটি কার্যকর হলে মিশেল ওবামার লেটস মুভ কার্যক্রমের কিছু অংশ এবং ২০১০ সালের ‘স্বাস্থ্যকর, ক্ষুধামুক্ত শিশু আইন’ পরিবর্তন করা হবে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল হোয়াইট হাউসে থাকাকালে স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ একটি প্রধান ইস্যু হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। অপরদিকে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাঙ্কফুডপ্রীতি সবারই জানা। অনুষ্ঠান-সমাবেশে গিয়ে বহুবার তাকে কেএফসি-ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার খেতে দেখা গেছে। ট্রাম্পের অন্যতম প্রিয় খাবারই হচ্ছে ব্লু চিজ দেয়া হ্যামবার্গার।

তবে নিজের পছন্দ বলে শিশুদেরও একই ধরনের খাবার খেতে দেয়া উচিত নয় মন্তব্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কড়া সমালোচনা করেছেন এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রেসিডেন্ট কেন কুক। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিদিন চিজবার্গার আর ফ্রাই খাচ্ছেন বলে শিশুরাও একই জিনিস চায় বা তাদের সেই সুযোগ দেয়া উচিত না।’

তিনি আরও বলেন, ‘৩০ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর স্কুল মেন্যুতে কী থাকবে কী থাকবে না তা আলু শিল্প আর জাঙ্কফুড লবিস্টদের নিয়ন্ত্রণে দেয়া উচিত নয়। দেশে অনেক শিশু স্থূলতায় ভুগছে। আমাদের উচিত তাদের জন্য স্থানীয় তাজা ফল-শাকসবজিপ্রাপ্তি সহজ করা, উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবারে সীমাবদ্ধ রাখা নয়। এটি শুধু এই মহামারীকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে।’

মিশেল ওবামার পুষ্টিনীতি বদলানোর দাবি তুলেছে মূলত খাদ্য প্রস্তুতকারক ও কিছু জেলা স্কুল। শিশুদের ফলমূল খাওয়ানোয় খরচ বেশি পড়ছে বলে অভিযোগ তাদের। আর এ প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইউএসডিএ। তাদের দাবি, ট্রাম্পের নতুন নীতি কার্যকর হলে খাদ্য অপচয় কমে যাবে।

ট্রাম্পের নতুন পুষ্টিনীতির বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ৯৯ হাজার স্কুলের ৩০ মিলিয়ন শিশু শিক্ষার্থী পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। এর দুই-তৃতীয়াংশই স্বল্পআয়ের পরিবারের সদস্য এবং তারা খাবার গ্রহণ করে কম দামে বা বিনামূল্যে।

স্বল্পআয়ের এসব শিশু শারীরিক স্থূলতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। তারা বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পায় না, স্কুলের খাবারই তাদের পুষ্টির প্রধান বিকল্প উৎস। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, দেশটির প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ শিশু-কিশোর স্থূলতার শিকার।

ট্রাম্পের নতুন পুষ্টিনীতিতে স্কুলের খাবারে ফল থাকার পরিমাণ এক কাপ থেকে কমিয়ে অর্ধেকে আনা হচ্ছে। খাবারে মাংস অথবা মাংসের বিকল্প দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই নীতিতে শিশুদের প্রতিদিন সবজি হিসেবে আলু খেতে দেয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে, পাশাপাশি পিজ্জা-বার্গারও দেয়া হবে। এ বিষয়ে আগামী ২১ জানুয়ারি জনমত গ্রহণ শুরু হবে।

এসএইচ-১২/১৮/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)