হিন্দুত্ববাদীরা ৮৫ বছরের আকবরিকেও পুড়িয়ে মারল

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভে উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা এলাকায় নতুন করে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। গত রোববার থেকে সংঘর্ষে দিল্লিতে কমপক্ষে ২৭ জন মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন ২০০ জন।

এদিকে এ সহিসংতায় দিল্লির খাজুরি খাস শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গমরি এক্সটেনশন লেনে আগুনে পুড়ে তৃতীয় তলায় মরে পড়েছেন সালমানের ৮৫ বছর বয়সী মা আকবরি।

সালমান (৪৮) একজন তৈরি পোশাকের ব্যবসায়ী। ছেলের ফোন পেয়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। কয়েক ঘণ্টা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন সালমান। তিনি ভাবছিলেন, ততক্ষণে বোধহয় সব শেষ হয়ে গেছে। মারা গেছে পরিবারের সদস্যরা। পরে এলাকায় গিয়ে জানতে পারলেন, দুর্বৃত্তরা বাড়ি ও দোকানপাটে আগুন দিলেও স্থানীয়দের বেশিরভাগই প্রাণে বেঁচে গেছেন। তবে তার মাকে বাঁচানো যায়নি।

দুর্বৃত্তরা শুধু তার বাড়িতে আগুন লাগিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। তারা তার বাসায় থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও আট লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইনকে সালমান বলেন, এখন আমার আর কিছুই নেই। আমি একদম শূন্য হয়ে গেলাম।

গমরি এক্সটেনশন লেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির খাজুরি খাসের একটি এলাকা। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে (সিএএ) কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জের ধরে দৃর্বৃত্তরা সেখানকার মুসলমানদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২২ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিলটির পক্ষে ও বিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ বাধে। বিলটির পক্ষের অনুসারীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে মুসলমানদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

রোববার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ নাশকতা সোমবার আশপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার মুসলমানরা বলেছেন, দুর্বৃত্তরা একের পর এক নাশকতা চালিয়ে গেলেও পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। মঙ্গলবার হামলার আশঙ্কায় মুসলিম বাসিন্দারা পালিয়ে যান।

সালমানির পরিবারে থাকতেন তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। ঘটনার সময় তার বড় ছেলে স্ত্রী হাসপাতালে ছিলেন। বাকি সদস্যদের পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা করেন সালমান।

সালমানি বলেন, তিনি দুধ কেনার জন্য বাইরে বের হওয়ার পর ঘর তালাবদ্ধ ছিল। নিরাপত্তার জন্যই এটা করা হয়েছিল। তবে দুর্বৃত্তরা তালা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়ে অগ্নিসংযোগ করে এবং লুটপাত চালায়।

তিনি বলেন, তার দোকানের কর্মচারীসহ পরিবারের সদস্যরা মেঝেতে নেমে আসেন এবং সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা বাড়িতে আটকা ছিলেন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।

বয়স্ক হওয়ায় ঘর থেকে বের হতে পারেননি আকবরি

সালমানি জানিয়েছেন, তার মা বয়স্ক ছিলেন। এজন্য সবাই ঘর থেকে বের হতে পারলেও তিনি বের হতে পারেননি। ফলে আবদ্ধ ঘরে পুড়েই মারা গেছেন তিনি।

সালমানির অশীতিপর মায়ের মরদেহ গুরু তেজ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতালে রাখা আছে। তার পরিবারকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার আকবরি বেগমের ময়নাতদন্ত করা হবে।

মেরুত জেলার নিজ গ্রামে মাকে সমাহিত করার কথা ভাবছেন সালমানি। পাশাপাশি তিনি অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের নামে এফআইআর দায়ের করবেন।

এসএইচ-১১/২৭/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)