আইসিইউতে বরিস জনসন: কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় বর্তমানে তাকে লন্ডনের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ১০দিন পর শারীরিক অবনতি ঘটলে সোমবার তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

ব্রিটিশ এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। ওয়ারউইক মেডিক্যাল স্কুলের জেনারেল প্রাকটিশনার এবং অনারারি ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক জেমস গিল বলেন, এ বিস্ময়কর সংবাদটিকে মহামারির এই পরিবেশে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও দূরত্ব বজায় রাখার বিদ্যমান নির্দেশনাকে আরও দৃঢ়ভাবে মেনে চলার ইঙ্গিত হিসাবে নেয়া উচিত।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে এখনও যথেষ্ট তথ্য নেই। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী জনসনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে জল্পনা ছড়ানো উচিত হবে না। তিনি কোভিড-১৯ ম্যারাথনের আরেকজন রোগী মাত্র। তার এই পরিস্থিতি অন্যান্য রোগীর ক্ষেত্রে তাদের জীবনের জন্য অন্যতম শারীরিক চ্যালেঞ্জ হবে। এই ম্যারাথন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সফলভাবে ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়াতে আগামী কয়েক ঘন্টা এবং কয়েকদিন আইটিইউ (ইনটেনসিভ থেরাপি ইউনিট) দলের সমর্থন তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়ারউইক মেডিক্যাল স্কুলের ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের ফ্যাকাল্টি আলিসন পিটার্ড বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইসিইউতে প্রবেশ করার সঙ্গে তিনি এখন আমাদের সবার চিন্তায় আছেন। আইসিইউর রোগী হিসাবে তার দেখাশোনা করার জন্য একটি দুর্দান্ত মাল্টি-প্রফেশনাল দল, একটি নিবিড় পরিচর্যা দল থাকবে; তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র কী এবং ভবিষ্যতের জন্য এর গুরুত্ব কী; সেসম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ অন্তর্দৃষ্টি দেবে। আমি জানি, তিনি সেখানে সর্বোচ্চ সেবাই পাবেন।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মেডিক্যাল ইমাজিংয়ের অধ্যাপক ডেরেক হিল বলেন, বরিস জনসন যে খুবই অসুস্থ; সেটি নিয়ে এবার আর কোনও সন্দেহ নেই। সব দেশেই কোভিড-১৯ এর অন্যতম বৈশিষ্ট্যে দেখা যাচ্ছে, নারীদের চেয়ে পুরুষরাই অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন; বিশেষ করে ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা। তবে আমরা জানি কোভিড-১৯ এ ৬০ বছর বয়সের নিচে যারা আক্রান্ত হয়েছেন; তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন, এমন লোকদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের পাবলিক হেলথের অধ্যাপক লিন্ডা বল্ড বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে আইসিইউতে নেয়াটা বিশাল উদ্বেগের এবং এটি একই সাথে ভাইরাসটি কতটা নির্বিচার সেটি তুলে ধরেছে। আমাদের সমাজের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত জায়গায় থেকেও যে কেউ যে কোনও মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারেন এবং গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন।

‘অন্যকে ঝুঁকিতে না ফেলতে এবং নিজের সুরক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে বাড়িতে থাকাটাই এখন বেশি জরুরি।’

গত সপ্তাহে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা যাওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ১০ দিন পরও তার শরীরে করোনার উপসর্গ থাকায় রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয় তাকে।

এদিকে, ব্রিটিশ এই প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা।

এসএইচ-১২/০৭/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)