হেরেও এগিয়ে গেলেন ট্রাম্প

গত ৩ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু নির্বাচনে হেরে গিয়েও যেন জিতে গেছেন এই রিপাবলিকান নেতা। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের চেয়ে এ বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতিগত সংখ্যালঘুদের ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি।

২০১৬ সালের তুলনায় ২০২০ সালের নির্বাচনে সব মিলিয়ে এক কোটি ভোট বেশি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আলোচিত-সমালোচিত এই প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা না কমে বরং পপুলার ভোট বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা অবাক হয়েছেন স্বয়ং মার্কির্নিরাও। জনপ্রিয় বাড়ার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, গেল চার বছরে তার শাসনামলে বেশ কিছুপদক্ষেপ নেনে ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এতেই কাজ হয়েছে বলে মনে করছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

রক্ষণশীল নীতি দিয়ে শ্বেতাঙ্গদের পাশাপাশি অনেক অন্যান্য বর্ণের গোত্রের লোকদেরও আকৃষ্ট করেছেন ট্রাম্প। অনেকে এমনও মনে করেন, ট্রাম্পের চেয়ে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট খ্রিষ্টান ক্যাথলিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গঠন করতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারণায় ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে বামপন্থিদের নানা নানা মন্তব্য করেছেন তিনি। ফলে কিউবা, বলিভিয়া কিংবা ভেনেজুয়েলা থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন, তারা ট্রাম্পকেই ভোট দিয়েছেন।

এডিসন রিসার্চ-এনইপির জরিপে দেখা গেছে, একচেটিয়াভাবে শ্বেতাঙ্গদের ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিক একচেটিয়াভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট পেয়েছেন নবনির্বাচিত ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর কারণ হিসেবে, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশি নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বেই সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ট্রাম্পও পুলিশের পক্ষেই কথা বলেন। এতে ভোটের উপর প্রভাব পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে উল্টো। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও গেল বারের নির্বাচনের তুলনায় এবার তাদের ভোট বেশি পেয়েছেন এই ডেমোক্র্যাট নেতা ট্রাম্প।

কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ভোট পেয়েছেন ৫ শতাংশ। অথচ গত নির্বাচনে এই গোষ্ঠীর একচেটিয়া ভোট পেয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। ২০১৬ সালের তুলনায় হিস্পানিক বা ল্যাতিনো পুরুষদের ৪ শতাংশ এবং নারীদের ৫ শতাংশ ভোট বেশি পান ট্রাম্প। ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এশীয় এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প, যা গতবারের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।

কৃষ্ণাঙ্গদের ছাড়িয়ে চলতি বছর ল্যাতিনোরা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সংখ্যালঘু ভোটার গোষ্ঠী হিসেবে উঠে আসে। অভিবাসন ইস্যুতে সব সময়ই রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করে আসা ট্রাম্পের পক্ষে তাদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে সাম্প্রতিকসময়গুলোতে। অন্য একটি পরিসংখ্যান বলছে, ৬৭ শতাংশ ল্যাতিনো অবৈধ অভিবাসী নিয়ে চিন্তিত। এ সংখ্যা লাতিনো নন এমন শ্বেতাঙ্গদের ৫৯ শতাংশ তুলনায় বেশি। ২০১৮ সালে পরিচালিত হাওয়ার্ড-হ্যারিস জরিপে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সংখ্যা কমানো উচিত। ৫৪ শতাংশ কঠোর অভিবাসন নীতির পক্ষে।

এসব জরিপ থেকে একটি বিষয় পরিস্কার তা হলো, অনেক কৃষ্ণাঙ্গ এবং লাতিনো ট্রাম্পের রক্ষণশীলতা পছন্দ করছেন নিজেদের রুটি-রুজি নিশ্চিত করতে, যাতে সেখানে কেউ ভাগ বসাতে না পারে। অন্যদিকে, যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত হয়ে আসা ডেমোক্র্যাটদের উদারনীতি নিয়ে সন্দিহান অনেক কৃষ্ণাঙ্গ এবং লাতিনো। বরং গত চার বছরে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ভালো অবস্থানে নিতে পারায় তার প্রতি এসব সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সমর্থন বেড়েছে। এ ছাড়া ডেমোক্র্যাটদের বামপন্থি হিসেবে প্রচার চালিয়েও সফলতা পেয়েছেন ট্রাম্প।

এসএইচ-১১/২৮/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)