শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভালো হওয়ার আগে আরও খারাপ হবে: নতুন প্রধানমন্ত্রী

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, একটি অর্থনৈতিক সংকট যা দুর্দশা এবং অস্থিরতা নিয়ে এসেছে। এটি ভালো হওয়ার আগে আরও খারাপ হতে চলেছে।

দেশটিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। বিক্ষোভ থামাতে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে রনিল বিক্রমাসিংহেকে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি বিরোধী দলীয় এমপির ষষ্ঠ মেয়াদ। সরকারবিরোধীদের ক্ষোভ মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের অপ্রতুলতা ও নজিরবিহীন লোডশেডিং তথা বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর বিবিসির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতকারে বিক্রমাসিংহে বলেন, তিনি নিশ্চিত করবেন যাতে পরিবারগুলি দিনে তিন বেলা খাবার পায়। আরও আর্থিক সাহায্যের জন্য বিশ্বের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষুধার সংকট থাকবে না, আমরা আরও খাবার খুঁজে পাব।

নতুন প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে ‘ভাঙা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, শ্রীলঙ্কানদের প্রতি তার বার্তা হবে ‘ধৈর্য ধরুন, আমি অর্থনীতি ফিরিয়ে আনব।’

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসের কাছে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তার এই নিয়োগটি খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে, কেননা তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ।
বিক্রমাসিংহে বলেন, তিনি বিক্ষোভকারীদের অনুভূতির সঙ্গে একমত হয়েছেন, যারা রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে, কিন্তু তা হবে না। অভিযোগ করলে কাজ হবে না।

এদিকে, কয়েক মাস ধরে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক পতন প্রত্যক্ষ করছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, যা দেশটির সরকারকে গভীর সংকটে ফেলেছে। সবশেষ গত সোমবার (৯ মে) সকাল থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় ক্ষমতাসীন সরকারের এক সংসদ সদস্যসহ অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এটি দ্বীপ রাষ্ট্রের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট।

দেশটির প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করেছেন। আর তার ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এখনো দেশের এই অস্থির পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

কিছুদিন আগেও শ্রীলঙ্কা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতির দেশ। মাথাপিছু জিডিপি ছিল ৪ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। শ্রীলঙ্কার ৯৫ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। শিক্ষাব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। ভারতের কেরালার পর দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থাও দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা। কিন্তু শ্রীলঙ্কা এখন ৭৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সংকটজনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজাপক্ষে সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা শ্রীলঙ্কার আর্থিক খাতকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে ফেলেছে। জাতীয় আয়ের চেয়ে জাতীয় ব্যয় বেড়েছে। এর ফলে রফতানিযোগ্য পণ্য ও সেবার উৎপাদন তলানিতে ঠেকেছে। এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে রাজাপক্ষে সরকারের বড় মাত্রায় কর হ্রাসের পদক্ষেপের কারণে।

শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ এ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই আঘাত হানে করোনা মহামারি। মহামারি মোকাবিলা করতে দেশটির রাজস্ব আয়ের প্রধান ভিত্তি পর্যটন শিল্প রাতারাতি উবে যায়। এ ছাড়া প্রবাসী শ্রমিকরা বিদেশ থেকে কাড়ি কাড়ি যে অর্থ পাঠাত, তা-ও এ সময়ে অনেকটাই কমে যায়।

শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার বড় উৎস রেমিট্যান্স। করোনার আগে শ্রীলঙ্কা পর্যটন এবং রেমিট্যান্স থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। মহামারির জেরে যেমন পর্যটন খাতের ক্ষতি হয়েছে, তেমনি রেমিট্যান্সের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখতে সরকার বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

এসএইচ-১২/১৩/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)