ভারতে কি মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে?

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন ভাইরাস মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২০টির বেশি দেশে বিরল এই রোগ শনাক্ত হয়েছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত ভারতে এমন কোনো কেস পাওয়া যায়নি।

ইউরোপ ও আমেরিকার দেশে দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা দেখা দেওয়ায় অগ্রিম সতর্কতা অবলম্বন করছে ভারত। গত সপ্তাহেই ভারতে আগত বিদেশি যাত্রীদের পরীক্ষা করার জন্য দেশের সব বিমানবন্দরে নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির সরকার।

এদিকে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ রোধ করতে পুরোদমে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে তামিলনাড়ু, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্র। তামিলনাড়ুতে মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে জেলা কালেক্টরদের চিঠি দিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

যাদের দেহে ফুঁসকুড়ি বা গুটিবসন্ত জাতীয় ফোঁড়া দেখা গেছে বা যারা গত ২১ দিনে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণযুক্ত দেশ ভ্রমণ করেছে বা যারা মাঙ্কিপক্স রোগীদের সংস্পর্শে এসেছে তাদের নজরদারির মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

এদিকে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত মুম্বাইয়ের চিঞ্চপোকলিতে কস্তুরবা হাসপাতালে সংক্রামক রোগের জন্য ২৮ শয্যার ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের রোগীদের আলাদা করা যায়। মুম্বাই জনস্বাস্থ্য বিভাগ সোমবার একটি বিবৃতিতে জানায়, শহরে এখনও মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

রাজস্থান সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে রাজস্থানে আসা যাত্রীদের একটি ‘স্ক্রিনিং’ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হবে। যদি সংক্রমণের সন্দেহ হয় বা রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে, তাহলে কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হবে।

একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত দেশ অর্থাৎ ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকা থেকে দেশে ফেরেন এবং তার মধ্যে মাঙ্কিপক্সের কোনো লক্ষণ থাকে তাহলে অবিলম্বে সেই ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখতে হবে।

মাঙ্কিপক্স নতুন কোনো রোগ নয়। তারপরও মানুষের এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই বললেই চলে। জানা গেছে, এ রোগ নিয়ে যুক্তরাজ্যে ২০১৮ সাল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৭ জনের মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়।

এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল সম্প্রতি ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে মাঙ্কিপক্স চিকিৎসার কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কিছু ‘অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ’ বা ভাইরাসপ্রতিরোধী ওষুধ রয়েছে যা মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো দূর করতে ব্যবহার করা যায়।

ওই গবেষণায় এও দাবি করা হয়েছে, ভাইরাস প্রতিরোধী এসব ওষুধ প্রয়োগও করা হয়েছে। তাতে মাঙ্কিপক্সের রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়েছে উঠেছে। এক্ষেত্রে রোগীকে টেকোভাইরিম্যাট বা ব্রিনসিডোফোভিরের মতো ভাইরাসে প্রতিরোধী ওষুধ প্রয়োগ করে কাঙিক্ষত ফল পাওয়া গেছে বলেও গবেষণায় বলা হয়েছে।

গবেষকদের মতে, মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ নির্ণয় করা কঠিন কিছু নয়। শুধুমাত্র রক্ত ও লালা বা থুথু পরীক্ষা করেই শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কি নেই তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।

এদিকে মন্ট্রিলের স্থানীয় একটি সোওনা বাথ থেকে কানাডাজুড়ে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। সোওনা বাথ এক ধরনের গোসলখানা যেখানে একসঙ্গে অনেকেই গোসল করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় এ সোওনা বাথের ব্যবহার দেখা যায়। কানাডায় মাঙ্কিপক্স রোগীর চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত একাধিক চিকিৎসক বলছেন, মন্ট্রিলের একটি সোওনা বাথ থেকে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে কানাডায় মাঙ্কিপক্স প্রথম দুইজনের শরীরে শনাক্ত করেন কুইবেক প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এরপর থেকে সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দেশটির পাবলিক হেলথ এজেন্সি (পিএইচএসি) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৬ জন শনাক্ত হয়েছে। এদের সবাই কুইবেক প্রদেশের বাসিন্দা।

পিএইচএসি এক বিবৃতিতে বলেছে, একাধিক জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে টেস্ট করার জন্য। মন্ট্রিলের একজন সরকারি চিকিৎসক রবার্ট পিলারস্কি। গত সপ্তাহে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত এক রোগীকে চিকিৎসা করেন তিনি। বৃহস্পতিবার গ্লোবাল নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে এ চিকিৎসক বলেন, তার ওই রোগী সম্প্রতি জি আই জো নামে স্থানীয় একটি সোওনা বাথে গোসল করতে গিয়েছিলেন। সম্ভবত সেখান থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।

পিলারস্কির কথায়, ‘ওই জি আই জো সোওনা বাথকেই ভাইরাসের আঁতুড়ঘর বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্লোবাল নিউজকে আরেক চিকিৎসক মন্ট্রিলের ওই সোওনা বাথকেই মাঙ্কিপক্সের উৎস বলে চিহ্নিত করেছেন।

মহামারি করোনার মধ্যেই নতুন আতঙ্ক হয়ে এবার সামনে এসেছে মাঙ্কিপক্স। বিরল এ রোগটি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে। প্রথম মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় যুক্তরাজ্যে। এরপর ইউরোপের স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেনেও এ রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।

এসএইচ-২৩/২৭/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)