ধনকুবেরদের নতুন স্বর্গরাজ্য দুবাই নিষেধাজ্ঞার শিকার

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নানামুখী নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার ধনকুবেররা দলে দলে দুবাইমুখী। আরব আমীরাতে রুশ ধনকুবেরদের বিচরণকে ভালো চোখে দেখছে না পশ্চিমা বিশ্ব। নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, পুতিন ঘনিষ্ঠ অন্তত ৩৮ ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তার সম্পত্তি রয়েছে দুবাইয়ে। এ অবস্থায় মস্কোর মতো দুবাইয়ের ওপরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে পশ্চিমা বিশ্ব।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রুশ ধনকুবেরদের জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে দুবাই নগরী। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে হঠতে বাধ্য হওয়া রাশিয়ার ধনকুবেররা দলে দলে দুবাইমুখী। টাকার বস্তা নিয়ে আসা এসব ধনী অতিথিদের আদর আপ্যায়নে কোনো ত্রুটিই রাখছে না বিলাসবহুল ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত দুবাই। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আছর তাই খুব একটা পড়ছে না এসব ধনী রাশিয়ানদের ওপর।

রুশ ধনকুবের আন্দ্রে মেলনিচেঙ্কোর সুপার ইয়টটির দেখা মেলে রাস আল খাইমাহ বন্দরে। দুবাইয়ে দেখা যায় ধনকুবের আনদ্রেই স্কচ এর সুপার ইয়ট মাদাম গুকে। দুবাইয়ে রয়েছে চেলসির সাবেক মালিক রোমান অব্রামোভিচ এর শখের ব্যক্তিগত সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার বিমানটি। কিন্তু দুবাইয়ে রুশ ধনকুবেরদের বিচরণকে ভালো চোখে দেখছেনা পশ্চিমা বিশ্ব। ব্লুমবার্গ, বিজনেস ইনসাইডার, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করা হচ্ছে নিয়মিত।

নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা কিভাবে তাদের ধনসম্পদ পশ্চিমা দেশগুলো থেকে দুবাইয়ে স্থানান্তরিত করছে সে ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিজনেস ইনসাইডার। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, পুতিন ঘনিষ্ঠ অন্তত ৩৮ ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তার সম্পত্তি রয়েছে দুবাইয়ে।

পাশাপাশি মস্কোর মত দুবাইয়ের ওপরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন মহল। দুবাইকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য ইউরোপীয় কমিশনে আবেদন করেছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের একদল সদস্য।

দুবাইয়ের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তৎপর হয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক অপরাধ নজরদারি সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। গত মার্চ মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ধূসর তালিকাভুক্ত করে তারা। ধনকুবেরদের আনাগোনা এবং নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে অর্থ পাচারের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে এফবিআইও।

এ সব বিষয় নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়েও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের নিন্দা না জানানোয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ আরব মিত্রদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

রাশিয়ার পর্যটকদের জনপ্রিয় গন্তব্য দুবাই। সেখানে স্থায়ী বসবাস এক লাখেরও বেশি রুশভাষীর। দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট এজেন্ট বেটারহোমের জরিপে দেখা গেছে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দুবাইয়ে সম্পত্তি বিক্রি বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। যার বেশিরভাগ ক্রেতাই রুশভাষী।

রাশিয়ার নাগরিকদের ব্যাপক হারে দুবাইয়ে আসায় সেখানে বেড়ে গেছে ফ্ল্যাট, বাড়ি ও ভিলার দাম। দুবাইকে সেকেন্ড হোম বিবেচনা করছে অনেক রুশ নাগরিকই। মডার্ন লিভিং নামের দুবাইয়ের একটি রিয়েল এস্টেট এজেন্সি জানায়, রুশ গ্রাহক বেড়ে যাওয়ায় অধিক হারে রুশ ভাষী কর্মী নিয়োগ দিচ্ছেন তারা।

দুবাইয়ের আতিথেয়তার মুগ্ধ রাশিয়ানরাও। নিউইয়র্ক টাইমসকে এক রুশ ব্যবসায়ী জানান, এই মুহূর্তে রাশিয়ার পাসপোর্ট বিষের মতো। যখন কেউ গ্রহণ করছে না, তখন দুবাই তাদের স্বাগত জানাচ্ছে।

এসএইচ-০৮/১৪/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)