পদত্যাগে অস্বীকৃতি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর

পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগের জোর দাবি উঠেছে। তবে পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।

রোববার ফ্রান্সের জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জোট। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে ভালো ফলাফল করেছে বাম-গ্রিন জোট ও কট্টর ডানপন্থীরা।

এরপরই ম্যাক্রোঁকে পদত্যাগের প্রস্তাব দেন তারই নিয়োগ দেওয়া প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নি। সম্প্রতি বর্নিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন ম্যাক্রোঁ। নির্বাচনের ফলাফলকে তিনি নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেন। শুধু তাই নয়, আধুনিক ফ্রান্স কখনও এমন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি দেখেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে প্রধানমন্ত্রীর ওই পদত্যাগের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। মঙ্গলবার (২১ জুন) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তার সরকার অবশ্যই দায়িত্ব পালন ব্যাহত রাখবে।

দুই মাসেরও কম সময় আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন ম্যাক্রোঁ। পার্লামেন্ট নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভোটে কয়েক ডজন আসন হারিয়েছে তার মধ্যপন্থী জোট। এর ফলে ম্যাক্রোঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কার্যত হুমকির মুখে পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপর্যয়কর ফলাফলের কারণে সরকার গঠনে সমর্থনের জন্য ম্যাক্রোঁকে এখন প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিতে হবে। কিন্তু বিরোধী মেরিন লি পেনের কট্টর ডানপন্থী দল বা জ্য লুক মেলেশঁ’র বামপন্থী গ্রিন জোট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে কাজ করতে মোটেও আগ্রহী নয়।

ফ্রান্সের ৫৭৭ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৮৯আসন। কিন্তু ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থী জোট এনসেম্বলে পেয়েছে ২৪৫টি আসন।

এ নির্বাচনে বাজিমাত করেছেন তারকা বামপন্থী নেতা হিসেবে খ্যাত জ্যঁ-লুক মেলেশঁ।বামপন্থী ও গ্রিনদের নিয়ে গঠিত তার নিউ ইকোল্যজিক্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল পপুলার ইউনিয়ন (এনইউপিইএস) জোট পেয়েছে ১৩১ আসন। অন্য বামপন্থী দলগুলো পেয়েছে ২২ আসন।

নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী মেরিন লি পেনের নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল র‌্যালির আসন বেড়েছে। তারা পেয়েছে ৮৯টি আসন। ডানপন্থী রিপাবলিকানস (ইউডিআই) পেয়েছে ৬৪ আসন।

নির্বাচনের ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বর্নি বলেন, এই পরিস্থিতি আমাদের দেশের ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এনেছে। এসব ঝুঁকি আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মোকাবিলা করছি। কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা গড়ে তুলতে আমরা শিগগিরই কাজ শুরু করব।

তবে কাজটি এতটা সহজ হবে না। কারণ অ্যাসেম্বলির দুটি বড় জোটই সহযোগিতার বিষয়ে আগ্রহী নয়। তবে এ বিষয়ে অনমনীয় অর্থমন্ত্রী ব্রুনো ল্য মেয়ার। যদিও এ জন্য অনেক কিছু করতে হবে বলে মানছেন তিনি।

বামপন্থী নেতা মেলেশঁ তার সমর্থকদের বলেছেন, প্রেসিডেন্টের দল ধরাশায়ী হয়েছে। তাদের হাতে এখন সব সম্ভাবনাই রয়েছে। আর মেরিন লি পেন বলেছেন, ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দুঃসাহসিক অভিযাত্রার ইতি ঘটল। তাকে সংখ্যালঘু সরকারে নামিয়ে আনা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ম্যাক্রোঁর জোটের সামনে দুটি পথ খোলা। অন্যদের জোটে ভিড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা অথবা সংখ্যালঘু সরকার চালিয়ে যাওয়া। সংখ্যালঘু সরকার চালিয়ে গেলে প্রতিটি বিল পাসের সময় দলগুলোর সঙ্গে তার জোটকে আলাদাভাবে মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে।

এসএইচ-১২/২১/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)