রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেয়ার খবর নাকচ করল ভারত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে ফ্ল্যাট দেয়ার খবর নাকচ করেছে দেশটির সরকার। রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে- কেন্দ্রীয় সরকারের এক মন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার কয়েকঘণ্টা পরই বিষয়টি নাকচ করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বন্দিশিবিরে নেয়া হবে এবং এক সময় তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। খবর আল জাজিরার।

বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আবাসন ও শহর ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকের পর রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিন এক টুইটবার্তায় ওই মন্ত্রী জানান, দিল্লির বক্করওয়ালায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফ্ল্যাট দেয়া হবে। ভারত বরাবরই এ দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে। একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

হরদীপ সিংহ পুরী আরও বলেন, দিল্লির বক্করওয়ালা এলাকার অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য তৈরি করা ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাদের সাধারণ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে এবং দিল্লি পুলিশ ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার জন্য থাকবে।’

এছাড়া সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের বিনামূল্যে আবাসনের জন্য ২৫০টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছে। সেই ফ্ল্যাটই হবে রোহিঙ্গাদের নতুন ঠিকানা।

ওই মন্ত্রীর বরাত দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করা হয়। তবে হরদীপ সিংহ পুরীর টুইটের কিছুক্ষণ পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নাকচ করে দেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অবৈধ অভিবাসী রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে গণমাধ্যমের একটি যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রতি সম্মান রেখে জানানো যাচ্ছে যে, নয়াদিল্লির বক্করওয়ালা এলাকায় রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাট দেয়ার কোনো নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়নি।’

২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। গণহত্যা থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে, বিশেষ করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা।

মূলত বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেয় তারা। এখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক। এর মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে উন্নত আবাসন প্রকল্পে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ওই সময় কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা ভারতেও আশ্রয় নেয়।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) এক হিসাবে দেশটিতে বর্তমানে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। দিল্লির আশপাশে বেশ কিছু বস্তিতে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। নরেন্দ্র মোদির সরকার এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ ও ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে অভিহিত করে আসছে।

এসএইচ-১৭/১৭/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)