পুতিনের হুমকি, সংলাপের আহ্বান চীনের

FILE PHOTO: Chinese President Xi Jinping and Russian President Vladimir Putin attend the ceremony of presenting Xi Jinping with a degree from the St. Petersburg State University at the St. Petersburg International Economic Forum in St. Petersburg, Russia, June 6, 2019. Dmitri Lovetsky/Pool via REUTERS

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ‘সামরিক সংহতিকরণ’ বা সামরিক বাহিনীর সেনাসংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। বুধবার জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে পুতিনের এমন হুঁশিয়ারির পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব পক্ষকে সংলাপে বসার পাশাপাশি পরামর্শ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলার উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ইউক্রেন সংকটে চীনের অবস্থান সুসংগঠিত এবং পরিষ্কার।

রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া একের পর এলাকা পুনরুদ্ধার করার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অব্যাহতভাবে যখন নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন, তখন কার্যত চুপ ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে নীরবতা ভেঙে এবার তীব্র ক্ষোভ দেখিয়েছেন তিনি।

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ সৈন্যদের আবার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখোমুখি হয়, তাহলে আমাদের জনগণকে রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ের ব্যবহার করবো। এটা কোনও ধাপ্পাবাজি নয়। রাশিয়ার কাছে ‘জবাব দেয়ার মতো বিপুল অস্ত্র’ আছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, রিজার্ভ বাহিনীর আংশিক সমাবেশে ৩ লাখ সৈন্যকে ডাকা হবে এবং যাদের পূর্বঅভিজ্ঞতা আছে তাদের মোতায়েন করা হবে।

পুতিনের এই ঘোষণা ইউক্রেন ঘিরে যে সংঘাত চলছে তা আরও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। পুতিন এমন সময় এই ঘোষণা দিয়েছেন, যখন ইউক্রেনীয় বাহিনী একের পর এক অঞ্চল পুনরুদ্ধার করছে এবং তাদের আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার এ আংশিক সংহতিকরণের বিষয়টি অস্পষ্ট এক ধারণা। তবে এর অর্থ হতে পারে, রুশ ব্যবসায়ী এবং নাগরিকদের যুদ্ধের প্রচেষ্টায় আরও বেশি অবদান রাখতে হবে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণ করা সত্ত্বেও রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেনি। এ আক্রমণকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলেই অভিহিত করে আসছে মস্কো।

তবে পুতিনের নতুন এ ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের ঘোষণাও আসতে পারে এবং সেক্ষেত্রে সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, পুতিনের এ ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিমারাও। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিলিয়ান কিগান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্পষ্টতই এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের খুব গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত। কারণ, আপনি জানেন আমরা নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনিও নিয়ন্ত্রণে আছেন কি-না আমরা সেটিও নিশ্চিত নই।

পুতিন জানিয়েছেন, পশ্চিমা শক্তি রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চায় এবং তারা ইউক্রেনেও শান্তি চায় না। রাশিয়ার সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এটি অব্যাহত থাকলে মস্কো তার বিশাল অস্ত্রাগারের সব শক্তি দিয়ে জবাব দেবে। আর জবাব দেয়ার জন্য রাশিয়ার কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র রয়েছে।’ রাশিয়ার মাতৃভূমি, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা আর জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য তিনি সামরিক সমাবেশের নির্দেশ দিয়েছেন।

পুতিন আরও বলেন, তার লক্ষ্য পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলকে পুরোপুরি ‘মুক্ত করা’ এবং এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ইউক্রেনের দাস হিসাবে আর ফিরে যেতে চায় না।

এর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে ১ লাখ ৩৭ হাজার সদস্য বাড়ানোর এক নির্দেশনায় (ডিক্রিতে) সই করেন পুতিন। বর্তমানে রুশ সামরিক বাহিনীতে মোট সদস্য সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। বেসামরিক কর্মী রয়েছে প্রায় ৯ লাখ।

পুতিনের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২০ লাখ ৩৯ হাজারেে উন্নীত করার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে সামরিক সদস্য হবে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৬২৮।’

এসএইচ-২০/২১/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)