পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে আনোয়ারকে

সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও রাজার অনুমোদনক্রমে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তবে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে তাকে। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার নিজেও সে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আগামী মাসে পার্লামেন্টে অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আস্থা ভোট আয়োজন করবেন।

নানা নাটকীয়তা শেষে নির্বাচনের ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিরোধী জোট পাকাতান হারাপানের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। জাতীয় নির্বাচনের পাঁচ দিন পর ২৪ নভেম্বর বিকেল ৫টায় ইস্তানা নেগারা রাজপ্রাসাদে রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন এবং একই সঙ্গে শপথবাক্য পাঠ করান।

ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের প্রতিবেদনমতে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে আস্থা ভোট নিয়ে কথা বলেন আনোয়ার। তিনি বলেন, আগামী ১৯ ডিসেম্বর যখন প্রথম অধিবেশন বসবে, তখন পার্লামেন্টের প্রথম কাজ হবে একটা আস্থা ভোটের আয়োজন করা।

মালয়েশিয়ায় কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। এই অস্থিতিশীলতা নিরসনের চেষ্টা হিসেবে গত শনিবার দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অংশগ্রহণমূলক হলেও কোনো দল বা জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকারবিরোধী জোট পাকাতান হারাপান (পিএইচ) ৮২টি আসন নিয়ে প্রথম হয়। এরপর ৭৩টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের জোট পেরিকাতান ন্যাশনাল (পিএন)। আর ৩০টি আসন নিয়ে তৃতীয় হয় ক্ষমতাসীন জোট বারিসান ন্যাশনাল (বিএন)।

নির্বাচনের পর আনোয়ার ইব্রাহিম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই তা দেখাতে পারেননি। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।

মালয়েশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলো সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে রাজা হস্তক্ষেপ করেন। তবে শেষ সুযোগ হিসেবে সোমবার দেশটির রাজা নোটিশ জারি করেন। এতে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুর ২টার মধ্যে দলগুলোকে ২১৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১১২টি আসন নিয়ে জোট সরকার গঠনের জন্য তালিকা জমা দিতে বলা হয়।

মঙ্গলবারের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে পারেনি। অচলাবস্থা কাটাতে প্রধান দুই জোটের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম ও মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজা। তবে দীর্ঘ দুই ঘণ্টার বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি প্রধান এই দুই জোট। এরপর বিষয়টি রাজার এখতিয়ারে চলে যায়।

দুদিন পর বৃহস্পতিবার সকালে ইস্তানা নেগারা রাজপ্রাসাদ থেকে এক বিবৃতিতে আনোয়ার ইব্রাহিমকে মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে আনোয়ার ইব্রাহিমের দীর্ঘ তিন দশকের প্রতীক্ষার অবসান হয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই সরকার গঠনে কাজ শুরু করেন আনোয়ার। এরই মধ্যে সরকারের কাঠামো নিয়ে কথা বলেছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ছোট আকারের মন্ত্রিসভা গঠন করবেন তিনি। শুধু তাই নয়, মন্ত্রীদের বেতন কমিয়ে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় কমানোর লক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ বলে জানান আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি বলেন, মন্ত্রীদের আগের চেয়ে কম বেতন দেয়া ও ছোট মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে মন্ত্রিসভার আকারও ছোট হবে। নতুন মন্ত্রীদের কম বেতন নেয়ার বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। বিষয়টি এখনও আলোচনা ও প্রস্তুতির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আমার কাছে এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে, মানুষের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় কমানো।’

এসএইচ-২২/২৬/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)