ভোট কারচুপি ও দুর্নীতি করে দীর্ঘ ৩৮ বছর ক্ষমতায় যে দেশের প্রধানমন্ত্রী

ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিরোধীদের ওপর দমন পীড়ন চালাত ভয়াবহ এক অভিযান শুরু করে কম্বোডিয়ার সরকার। দেশটির সরকার প্রধান হুন সেন আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে ভেঙে দিয়েছেন। বিরোধী দলের সাংসদ পদমর্যাদার নেতাদের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় অন্য নেতাদের।

প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে ছয় মাস পরে নির্বাচন দেন তিনি। ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে ক্যাম্বোডিয়ার সংসদের ১২৫টি আসনের সবকটিতেই জয় পায় তার দল।

পাঁচ বছর পর আগামীকাল রোববার আবারও দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনও ভোটারদের কাছে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তিই মনে হচ্ছে।

বর্তমানে ৭০ বছর বয়সী হুন সেন ১৯৮৫ সাল থেকে কম্বোডিয়া শাসন করছেন। এক সময় খেমার রুজ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও পরে তাদের পতনের আগে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে ভিয়েতনামের সাথে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ৩৮ বছর ধরে কম্বোডিয়ার ক্ষমতা ধরে রাখা হুন সেন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করেন।

এই দীর্ঘ সময় ধরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে তিনি কম্বোডিয়ার ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাগারে পাঠিয়ে, নির্বাসিত করে বা তাদের সাথে আঁতাত করে ক্ষমতার শীর্ষে নিজের অবস্থান অক্ষুন্ন রেখেছেন।

কম্বোডিয়ায় ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত খেমার রুজের শাসন চলাকালীন সময়ে ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হয় সেখানকার মানুষ। সেসময় কাম্পুচিয়া নামে পরিচিত ওই জনপদের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ২০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়। কম্বোডিয়ার মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৫ ভাগ তখন মারা যায়।

এরপর নব্বইয়ের দশকে জাতিসংঘ কম্বোডিয়াকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করে। এশিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি কম্বোডিয়া। জ্বালানির উচ্চমূল্য আর স্থির মজুরি এখানকার মানুষের মূল সমস্যা। এখানে দুর্নীতি প্রায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে গেছে, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। তার ওপর জমি দখল আর অপরাধের মাত্রা বাড়তে থাকায় মানুষের জীবন আরো অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

তবে জীবন নিয়ে এত অনিশ্চয়তা থাকলেও কম্বোডিয়ার সবাই জানে যে রোববারের ভোটে কম্বোডিয়ান পলিটিকাল পার্টি (সিপিপি) আবারো জিতবে।

দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের জন্ম ১৯৫২ সালে এক কৃষক পরিবারে। নমপেন-এ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছে শিক্ষা লাভ করেন তিনি। ষাটের দশকের শেষ দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। সে সময় এক বন্দুকযুদ্ধে তিনি তার বাম চোখ হারান।

সত্তরের দশকের শেষদিকে পল পটের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলে হুন সেন খেমার রুজের একজন কমান্ডার ছিলেন। খেমার রুজের শাসনামলে কম্বোডিয়ায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা যায়।

১৯৭৭ সালে তিনি ভিয়েতনামে পালিয়ে যান এবং খেমার রুজের বিরোধী সেনাদের সাথে যোগ দেন। কম্বোডিয়ায় ১৯৭৯ সালে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করে ভিয়েতনাম। তখন তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেশে ফেরত যান। পরে ১৯৮৫ সালে ৩৩ বছর বয়সে তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন।

১৯৯৩ সালের নির্বাচনে হুন সেন হেরে গেলেও পরাজয় মানতে অস্বীকার করেন। পরে ফুচিনচেপ পার্টির প্রিন্স নরোদম রানারিধের সাথে সমঝোতা করে দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন।

এরপর ১৯৯৭ সালে রক্তক্ষয়ী এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের ক্ষমতা দখল করেন এবং প্রিন্স রানারিধকে সাময়িকভাবে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন।

এ বছরের নির্বাচনের আগে কয়েক মাস ধরে হুন সেন তার একমাত্র কঠিন প্রতিপক্ষ ক্যান্ডললাইট পার্টিকে বিভিন্নভাবে দমন করেছেন। নির্বাচনের আগে শেষ পর্যন্ত তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

এ বছরের নির্বাচনে আরো ১৭টি পার্টি অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু তারা হয় অনেক ছোট অথবা ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত। সে কারণে এই দলগুলোকে এই নির্বাচনে একেবারেই তাৎপর্যহীন মনে করা হচ্ছে।

এসএইচ-০৭/২২/২৩ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)