গাজায় জঘন্য হামলা চলছে, সুনাককে সৌদি যুবরাজ

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। বৈঠকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে জঘন্য হামলা চলছে বলে সুনাককে জানিয়েছেন তিনি।

একইসঙ্গে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির ‘বিপজ্জনক পরিণতি’ সম্পর্কেও সতর্ক করে দিয়েছেন যুবরাজ সালমান। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে এক বৈঠকে সৌদি যুবরাজ গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। এছাড়া ইসরায়েলি এই হামলাকে ‘জঘন্য’ বলে অভিহিত করার পাশাপাশি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির ‘বিপজ্জনক পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন তিনি।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। মূলত এই অঞ্চলে উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে সৌদি আরবে বৃহস্পতিবার গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকটি করেন ঋষি সুনাক এবং মোহাম্মদ বিন সালমান।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েল এবং গাজায় নিরীহ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ভয়ঙ্কর বলে নেতারা সম্মত হয়েছেন। তারা এই অঞ্চলে আর কোনও উত্তেজনা এড়াতে প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এবং এই বিষয়ে পদক্ষেপের সমন্বয় করতে সম্মত হয়েছেন।’

টানা দুই সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এমনকি ইসরায়েলের হাতে অবরুদ্ধ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন গাজা বর্তমানে এক ভয়ানক মানবিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ভূখণ্ডটিতে পানি, খাদ্য, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে উভয় নেতাই গাজায় পানি, খাবার এবং ওষুধ সরবরাহের জন্য মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়ে চাপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ক্রমবর্ধমান জরুরি মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার রূপরেখা দিয়েছেন। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের ঘোষণাও রয়েছে।

প্রসঙ্গত, মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামের একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়ে ইসরায়েল।

হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া আরও ১৯৯ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।

পরে হামাসের হামলার প্রতিশোধে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সীমান্ত প্রাচীরের কাছে অবস্থান নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শত শত ট্যাংক। গাজায় অব্যাহত বিমান হামলার মধ্যেই এসব ট্যাংক গাজার কাছে নিয়ে আসা শুরু হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে— যে কোনও সময় গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হতে পারে।

এছাড়া গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও অভিযানে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৮০৮ জনে পৌঁছেছে এবং আহত হয়েছেন আরও ১২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। হতাহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ।

এসএ-০৯/১০/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)