জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পশ্চিত তীর অঞ্চলে ক্ষমতাসীন ফাতাহ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শনিবার মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত অপরাধ ও ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের স্পষ্ট ও ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করেছে। আমরা এই প্রতিবাদকে স্বাগত জানাই।’
‘এই প্রস্তাব ও ভোটের ফলাফল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে এবং একই সঙ্গে এই যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন শক্তির দ্বিমুখী অবস্থান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের রাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। আন্তর্জাতিক আইনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।’
শুক্রবার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে জর্ডান। সেই প্রস্তাবে গাজায় অবিলম্বে একটি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সেখানে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ সরবরাহ নিরপদ করা, উপত্যকার উত্তরাংশের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল— তা বাতিল করা, এই যুদ্ধে যেসব বেসামরিককে বন্দি করা হয়েছে তাদের সবাইকে মুক্ত করা প্রভৃতি পয়েন্ট থাকলেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের নাম সরাসরি হামাসের উল্লেখ করা হয়নি।
জর্ডান প্রস্তাবটি পেশ করার পর সেটির ওপর ভোটগ্রহণ হয়। এই পর্ব শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, জাতিসংঘের ১২০টি সদস্যরাষ্ট্র প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে, বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৪টি সদস্যরাষ্ট্র এবং ভোটদান থেকে বিরত থেকে বিরত থেকেছে ভারতসহ ৪৫ সদস্যরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত ইরেজ ক্রসিংয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে কয়েক শ প্রশিক্ষিত হামাস যোদ্ধা। ঢোকার পর সেখানে কয়েকশ বেসামরিক মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২২০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জিম্মি হিসেবেও ধরে নিয়ে যায় তারা।
এই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় বিমান অভিযান পরিচালনা শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী, যা এখনও চলছে। গত ২০ দিনের এই যুদ্ধে ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক এবং গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ হাজার।
এই যুদ্ধ বাঁধার চার সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো এ সম্পর্কিত কোনো প্রস্তাব ভোটের জন্য উত্থাপিত হলো সাধারণ পরিষদে।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে অবশ্য গত দু’সপ্তাহ ধরেই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বিরতি প্রসঙ্গে আলোচনা চলছে। ১৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো প্রস্তাব তোলে রাশিয়া, যা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আপত্তির (ভেটো) কারণে বাতিল হয়ে যায়।
পরে ২৫ অক্টোবর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিরাপদ রাখার জন্য ‘মানবিক বিরতি’র আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু রাশিয়া ও চীনের ভেটোর কারণে সেটিরও একই পরিণতি হয়।
এসএ-০৮/১০/২৮ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)