গাজায় ৩ সপ্তাহের শিশুমৃত্যুর হার ছাড়িয়ে গেছে গত ৪ বছরকে

গত চার বছরের প্রতি বছরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যত সংখ্যক শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক নিহত হয়েছে, তার চেয়েও বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে গত তিন সপ্তাহে। শিশুদের নিরাপত্তা ও অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (এনজিও) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ তথ্য।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর— মোট ২১ দিনে গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৩২৪ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরী; আর পশ্চিম তীর এলাকায় নিহত শিশু-ও কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা কমপক্ষে ৩৬। এছাড়াও গাজায় এখনও নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ১ হাজার শিশু। উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ধ্বংস্তূপগুলোর নিচে তারা চাপা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর বাইরে গত তিন সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযানে আহত হয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি শিশু।

জাতিসংঘের ‘ইউএন সেক্রেটারি-জেনারেল অন চিল্ডরেন অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট’ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নিজেদের প্রতিবেদনে সেভ দ্য চিল্ডরেন জানিয়েছে, ২০২২ সালের গোটা বছর গাজা ও পশ্চিম তীর অঞ্চলে নিহত হয়েছিল ২ হাজার ৯৮৫ জন শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫১৫ জন এবং ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৬৭৫ জন।]

ফিলিস্তিনে শিশুমৃত্যুর সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি রোববার প্রকাশ করেছে সেভ দ্য চিল্ডরেন। এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে সেভ দ্য চিল্ডরেনের ফিলিস্তিন শাখার কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যাসন লি বলেছেন, ‘একটি শিশুর মৃত্যু যেখানে মেনে নেওয়া কঠিন, সেখানে গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন শত শত শিশু হতাহত হচ্ছে। একমাত্র যুদ্ধবিরতি এই শিশুদের নিরাপত্তা ও জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন ‘মানুষের জন্য রাজনীতি’— এই সত্য সামনে রেখে ফিলিস্তিনের শিশুদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।’

গত ৭ অক্টোবর ভোররাতে ইসরায়েল ও গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় গাজার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। সীমান্তের বেড়া বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন শত শত প্রশিক্ষিত হামাস যোদ্ধা।

ইসরায়েলে ঢুকে প্রথমেই কয়েক শ বেসামরিক লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করেন তারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২১২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে জিম্মি হিসেবে ধরে যায় হামাস যোদ্ধারা।

এ ঘটনায় সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় বিমান অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় গাজার বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অভিযানে ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং এই নিহতদের ৪০ শতাংশ শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক।

সূত্র ; আলজাজিরা

এসএ-০৭/১০/৩০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)