ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে আগের অবস্থান থেকে সরে গেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যুদ্ধের পর গাজায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কোনো পরিকল্পনা নেই ইসরায়েলের।
মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গাজা জয় করতে চাই না, দখল করতে চাইনা এবং শাসনও করতে চাই না। আমরা চাই গাজায় এমন একটি নির্ভরযোগ্য বেসামরিক সরকার আসুক— যারা ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করবে না।’
এর আগে গত ৭ নভেম্বর, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের একমাস পূর্তির দিনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজা উপত্যকার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ইসরায়েলের হাতে থাকবে।
সেই বক্তব্য দেওয়ার ২ দিনের পরই কার্যত আগের অবস্থান থেকে ঘুরে গেলেন তিনি। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণেই আগের অবস্থান থেকে সরেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
তবে ফক্স নিউজকে তিনি বলেছেন, যদি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভবিষ্যতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়— তাহলে ফের উপত্যকায় প্রবেশ করবে ইসরায়েলি বাহিনী।
এ প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা কেবল এই নিশ্চয়তা চাই যে ৭ অক্টোবরের মতো ভয়াবহ হামলা আর সেখান থেকে ঘটবে না। যদি ঘটে, সেক্ষেত্রে ফের আমরা গাজায় প্রবেশ করব এবং হামলাকারীকে হত্যা করব। হামাসের মতো আর কোনো গোষ্ঠীকে আমরা সেখানে দেখতে চাই না।’
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। সেই অভিযান এখনও চলছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে উপত্যকায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের স্থল বাহিনীও।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। এছাড়া হামলার প্রথম দিনই ইসরায়েল থেকে অন্তত ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধার। অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১০ হাজার। এই নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও নারী।
এই যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহ পর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া। সেই প্রস্তাবে সমর্থন জানায় চীনও। বর্তমানে জাতিসংঘ, ইসলামি বিশ্ব ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের দেশও গাজায় যুদ্ধবিরতি আহ্বানের সোচ্চার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বস্তুত, ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার সংঘাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে। ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ তারা থামাবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইসরায়েলের এই অবস্থানকে সমর্থনও করছে। তবে সমর্থনের পাশাপাশি গাজায় মানবিক বিরতি ঘোষণার জন্য ইসরায়েলকে চাপও দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব।
তবে গাজায় কোনো প্রকার বিরতি ঘোষণায় শুরু থেকেই তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি অবশ্য তিনি বলেছেন, যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেয়— কেবল তাহলেই মানবিক বিরতি হতে পারে।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, বিরতি না দিলে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার অবশ্য গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা বিরতি দিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এখন থেকে প্রতিদিন বিরতি শুরুর তিন ঘণ্টা আগে সেই বিরতির সময় জানানো হবে।
সূত্র : বিবিসি
এসএ-০৭/১১/১০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)