দিল্লির অবস্থান অভিন্ন, বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন চায় আমেরিকা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের পরও দিল্লির অবস্থান অভিন্ন বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সমাধান বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই বের করবে। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র একক কোনো দলের পক্ষে নয়। শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিবেশ তৈরিতে কাজ করতে হবে সব পক্ষকে।

গত বুধবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সিইসি জানান, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি।

তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর আর প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। প্রচারণা শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।

সংলাপ–সমঝোতা, কোন দলের কী অবস্থান? সংলাপ–সমঝোতা, কোন দলের কী অবস্থান?
তফসিল ঘোষণার পরেও নিজেদের অবস্থানে অনড় দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। আগামী শনিবার থেকে দলটি মনোনয়ন পত্র বিক্রি শুরু করবে।

অন্যদিকে, তফসিল প্রত্যাখান করেছি বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় চালু ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী রবি ও সোমবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে দলটি।

এ অবস্থায় বাংলাদেশের দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত ও আমেরিকা কি ভাবছে তা নিয়ে তা নিয়ে আছে জোর আলোচনা। ভারত বরাবরই নির্বাচনকে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করে আসছে। অন্যদিকে, আমেরিকার অবস্থান কিছুটা ভিন্ন। নির্বাচন সামনে রেখে দেশটির কূটনৈতিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।

নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গীদের আনতে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ আছে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো দুই দলকে সংলাপে আনতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে আমেরিকা সরকার।

অবশ্য সংলাপের সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। গত বুধবার সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আমেরিকা সরকারের চিঠি নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন। পরে কাদের সাংবাদিকদের জানান, এখন আর সংলাপের সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের নির্বাচন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তফসিলের পরও বাংলাদেশ প্রশ্নে দিল্লির অবস্থান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারত-মার্কিন টু প্লাস টু মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপের পরে যেমনটা বলা হয়েছে, তেমনই আছে।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশের জনগণ এবং তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এ বিষয়ে সমাধান বের করবে। আমি এটা অনেকবার বলেছি… নির্বাচন প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে এবং তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এর একটি সমাধান বের করবে।’

ক্ষমা চেয়ে নির্বাচনে আসুন: বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে নির্বাচনে আসুন: বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী
তফসিল প্রসঙ্গ উঠে এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়েও। মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানান, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরও আমেরিকা একই বার্তা দিচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, আমেরিকার প্রত্যাশাও অভিন্ন। আর সেটি হল শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমেরিকা বাংলাদেশের কোনো একক রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এক দলের চেয়ে অন্য দলকে প্রাধান্য দেয় না। আমেরিকা সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন ও সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানায়। শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানায় আমেরিকা।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সবশেষ সংলাপটি হয় ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনের আগে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় সে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। সেবার বিএনপি নির্বাচনে আসে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামের একটি জোটের মাধ্যমে। সেই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

সংলাপের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসতে সম্মত হয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট। তবে নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি জোট। বিএনপি সেই নির্বাচনে পেয়েছিল মাত্র ৭টি আসন।

তার আগের জাতীয় নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের জোট শরীকরা অংশ নেয়নি। নির্বাচনে যাতে বিএনপি অংশ নেয় তা নিশ্চিত করতে বিদেশিদের মধ্যস্থতায়ও একাধিক মীমাংসার চেষ্টা হয়েছে। তবে এই প্রচেষ্টাগুলোও ব্যর্থ হয়।

এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে নিজেদের অবস্থানে এখনও পর্যন্ত অনড় বিএনপি। দলটি বলে আসছে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। এর অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলোতে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের অনেককেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এসএইচ-২১/১৭/২৩ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)