গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য কাতার-মিসরকে ধন্যবাদ বাইডেনের

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রস্তাবিত ৪ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য চলমান যুদ্ধের দুই মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার এবং মিসরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ায় সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে যেসব সাহসী হৃদয়ের মানুষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জিম্মায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করেছেন— তারা ফিরে আসবেন, নিজেদের বন্ধু-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন— এর চেয়ে আনন্দের কিছু আর হতে পারে না। আমি এবং জিল (যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন) খুবই আনন্দিত।’

‘সেই সঙ্গে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল সিসিকে। মূলত তাদের যোগ্য নেতৃত্ব, অংশীদারিত্ব ও মধ্যস্থতার কারণেই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে।’

গত সপ্তাহে কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতার ভিত্তিতে ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল কাতারে অবস্থানরত হামাসের হাইকমান্ড। সে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, যদি ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি, কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, উপত্যকায় ত্রাণপণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ এবং আহত বেসামরিকদের উপত্যকার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতি দেয়— তাহলে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ৫০ জনকে মুক্তি দেবে হামাস।

ইসরায়েল প্রথমে এই প্রস্তাব মানতে চায়নি, তবে সেখানকার জনগণ ও জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের চাপে মঙ্গলবার এক জরুরি বৈঠকে প্রস্তাবে সায় দিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। তবে বৈঠক শেষে এক বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা একটি যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি এবং যতদিন আমাদের লক্ষ্য পূরণ না হয়, ততদিন এই যুদ্ধ চলবে।’

হামাসও অবশ্য একই বিবৃতি দিয়েছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলেছে, ‘যুদ্ধবিরতি শেষে আমাদের আঙুল থাকবে বন্দুকের ট্রিগারে।’

গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নির্বিচারে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে তারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৮ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন।

হামাসের এই হামলার জবাবে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৪ হাজার। আর গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন।

যুদ্ধের শুরুর দিকে হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছিল, তাদের জিম্মায় প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলি রয়েছে। তবে পরে হামাস ঘোষণা করে, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার কারণে নিহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন জিম্মি।

এই যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা ও দূতের ভূমিকা পালন করে আসছে কাতার ও মিসর।

সূত্র : দ্য ন্যাশনাল

এসএ-০৭/১১/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)