গাজা উপত্যকায় চলমান অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মাত্র এক পঞ্চমাংশ যোদ্ধাকে হত্যা করতে পেরেছে ইসরায়েলের স্থল ও বিমান বাহিনী।
অর্থাৎ গত সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময়ে শতাংশ হিসেবে হামাসের ২০ শতাংশ যোদ্ধাকে শেষ করতে পেরেছে ইসরায়েলি বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল (ডবিউএসজে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ তথ্য।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তর পেন্টাগনের বরাত দিয়ে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—হামাসের সশস্ত্র বিভাগে নিয়মিত যোদ্ধার সংখ্যা ২৫ হাজার থেকে থেকে ৩০ হাজার। এছাড়া ওই এলাকার পুলিশ ও অন্যান্য কার্যালয়ে কর্মরত যোদ্ধা রয়েছেন আরও কয়েক হাজার যোদ্ধা। এই সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মার্কিন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জোসেফ ভোটেল ডব্লিউএসজেকে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বড়জোর ৫ হাজার বা তার কিছু বেশিসংখ্যক যোদ্ধাকে হত্যা করতে পেরেছে ইসরায়েলি সেনারা।
‘পাশাপাশি অবশ্য ১০ হাজার ৫০০ থেকৈ ১১ হাজার যোদ্ধাকে আহতও করতে পেরেছে তারা, কিন্তু এই আহত যোদ্ধারা যে কোনো সময় ফের যুদ্ধে ফিরে আসতে পারে,’ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন জোসেফ ভোটেল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, হামাসের মোট যোদ্ধার সংখ্যা ৩০ হাজার এবং তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার যোদ্ধাকে হত্যা করতে পেরেছে ইসরায়েলি সেনারা। তার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনারা অন্তত ১৬ হাজার যোদ্ধাকে আহত করেছে বলে দাবি এই ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
ওয়াশিংটন অবশ্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই দাবিকে আমলে নেয়নি। পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হলো, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গত সাড়ে তিন মাসের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েল হয়তো না ও মেনে নিতে পারে, তবে এটাই সত্য।’
‘আমরা যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলকে আরও সুচারু ও সুনির্দিষ্টভাবে অভিযান পরিচালনা করার জন্য বলে আসছি। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি ঠেকানোর জন্য বার বার তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা আমাদের কথাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে তিন মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নীচে এখন ও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।
গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে মিত্র ইসরায়েলের পাশেই দাঁড়িয়েছিল। সেই সঙ্গে গত সাড়ে ৩ মাস ধরে বার বার ইসরায়েলের সামরিক নীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে আসছে হোয়াইট হাউস। এসব প্রচেষ্টার মধ্যে নির্বিচারে বিমান হামলার পরিবর্তে আরও নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার, স্থল আক্রমণ নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি গাজা সংঘাত শেষে ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ সমাধানের পথে আসার আহ্বান উল্লেখযোগ্য।
এসএ-১০/২২/২৪(আন্তর্জাতিক ডেস্ক)