ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে যারা রাস্তায় নেমেছেন, পুলিশ তাদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ফোন এবং ল্যাপটপও বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কলকাতা পুলিশের নয়া নিযুক্ত কমিশনার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, নির্দিষ্ট আইন মেনেই কিছু ব্যক্তিকে ডাকা হয়েছে। এর সঙ্গে থ্রেট বা হুমকির কোনো সম্পর্ক নেই।
অভিযোগের সূত্রপাত গত ৪ সেপ্টেম্বর। ওই দিন রাত দখল কর্মসূচি পালিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। মধ্যরাতে বারাসত অঞ্চলে একটি ঘটনা ঘটে। সেখানে দেখা যায়, পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বলে।
এরপর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কথা কাটাকাটি হয়। আচমকা পুলিশ আন্দোলনকারীদের প্রিজন ভ্যানে তুলতে শুরু করে। নারী এবং শিশুদের ওপরেও নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।
ওই দিন রাতে ধৃতদের পরে অবশ্য বারাসত আদালতেও তোলা হয়েছিল। এরপর তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ একটি অডিও টেপ বাজারে ছাড়েন। সেই অডিও টেপের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ একটি মামলা করে এবং বাম যুব নেতা কলতান দাশগুপ্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলায় কলতান জামিন পেয়েছেন। আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।
এবার এমন আরো অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে। আন্দোলনকারীদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। থানায় ডেকে পাঠিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হচ্ছে। ফোন এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। অভিযোগ, ফোনের ব্যক্তিগত কল রেকর্ড, মেসেজ তুলে ধরে পুলিশ ‘হুমকি’ দিচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বারাসতের অরিত্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জন্য তাকে পুলিশ থানায় ডেকে পাঠিয়েছিল। সেখানে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনো জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই বসিয়ে রাখা হয়।
তার কথায়, “আন্দোলনের কিছু ভিডিও দেখিয়ে পুলিশ বলে, আমি লোক খেপানোর চেষ্টা করছি”। অভিযোগ, তার ব্যক্তিগত ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করে পুলিশ। একই অভিযোগ সোমনাথ ঘোষ নামে আরেক আন্দোলনকারীর। তিনি জানিয়েছেন, আন্দোলনে যোগ দিলে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
আইনজীবী অরিন্দম দাস জানিয়েছেন, “আমার কাছেও এমন বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু মামলা পুলিশের বিরুদ্ধে হয়েছে। আরো মামলা হতে পারে।”
অরিন্দমের বক্তব্য, কোনো আন্দোলনে যোগ দেওয়া মানুষের অধিকার। আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলে প্রশাসন তা দমন করতে পারে না। আরজি কর আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। পুলিশের আচরণ নিন্দনীয়।
কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা অবশ্য জানিয়েছেন, নতুন আইন সংহিতার ধারা মেনেই পুলিশ কিছু আন্দোলনকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। নোটিস দিয়ে থানায় ডেকে পাঠিয়েছে। তবে কাউকে কোনোরকম হুমকি দেওয়া হয়নি।
পুলিশ কমিশনারের দাবি, “যদি পরে কারও অসাধু উদ্দেশ্য সামনে আসে, তা হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
আইনজীবীদের বক্তব্য, যাদের ‘হেনস্থা’ করা হয়েছে, তাদের হয়ে নির্দিষ্ট আইনে মামলা করা হয়েছে। শুনানিতে অভিযোগ আরো স্পষ্ট হবে।
এসএ-১০/০৯/২৪(আন্তর্জাতিক ডেস্ক)