বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপ হয়েছে বলে যে সংবাদ চাউর হয়েছে, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র এবং পুতিনের প্রেসসচিব দিমিত্রি পেসকভ এই সংবাদকে ‘অসত্য’ এবং ‘কাল্পনিক’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
রোববার রাজধানী মস্কোতে ক্রেমলিন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো কথাবার্তা হয়নি। যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো পুরোপুরি অসত্য এবং কাল্পনিক।”
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্প্রতি টেলিফোনে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকাংশ প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম। সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবন মার-আ-লাগোতে টেলিফোনে কথা হয়েছে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের পর শিগগিরই ইউক্রেনে যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন বলে পুতিনকে আশ্বস্ত করেছেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর তৎপরতাকে কমিয়ে আনার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
এ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের ব্রিফিংয়ে পেসকভ বলেন, “পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর মান যে ক্রমশঃ নেমে যাচ্ছে, এ ধরনের কাল্পনিক তথ্যনির্ভর সংবাদ প্রকাশ তার প্রমাণ।”
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তি মেনে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদবিরের জেরে কয়েক বছর টানাপোড়েনের পর গত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী, যা এখনও চলছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ অভিযানে গত প্রায় তিন বছরে উভয়পক্ষের হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালে মস্কো একাধিকবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে কিয়েভ শান্তি সংলাপে আসলে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বন্ধ করবে রুশ বাহিনী; কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে পুতিনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে কোনো প্রকার সংলাপে যাবে না কিয়েভ। এই মর্মে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রিও জারি করেছেন তিনি।
এদিকে ইউক্রেনে যখন অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধার পর বাইডেন প্রশাসন দ্ব্যর্থহীনভাবে ইউক্রেনের সমর্থনে দাঁড়িয়ে যায় এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে শত শত নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি ইউক্রেনে কোটি কোটি ডলার সহায়তা প্রদান করতে থাকে। গত প্রায় তিন বছরে হাজার হাজার কোটি ডলার ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন।
বাইডেন প্রশাসনের এ পদক্ষেপের কঠোর সমালোচক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিকবার তিনি বলেছেন যে ওয়াশিংটনের উচিত ইউক্রেনে অর্থ সহায়তা পাঠানো বন্ধ করা এবং রাশিয়ার সংঙ্গে শান্তি সংলাপ শুরু করার জন্য ইউক্রেনকে চাপ দেওয়া।
আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
রোববার ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ইউক্রেনকে বাইডেন প্রশাসনের সর্বশেষ সহায়তা হিসেবে ৬০০ কোটি ডলার শিগগিরই পাঠানো হবে। ২০ জানুয়ারির পর থেকে ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি।
সূত্র : রয়টার্স
এসএ-০৯/১১/২৪(আন্তর্জাতিক ডেস্ক)