ভারতের উত্তর প্রদেশের সামভালে মুঘল আমলে তৈরি একটি মসজিদের স্থানে সমীক্ষা চালানো ঘিরে তৈরি হওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে পৌঁছেছে। শতাব্দি প্রাচীন এই মসজিদের স্থানে মন্দির ছিল বলে হিন্দুদের দাবির পর রোববার সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের সমীক্ষা চালানোর সময় সংঘর্ষে ওই ছয় মুসলিমের প্রাণহানি ঘটে।
সামভালে রোববারের সহিংসতায় প্রায় ২০ পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চিরাগ গয়াল।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) জরিপকারীদের একটি দলকে রোববার সামভালের শাহী জামা মসজিদে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের সময় বন্দুকের গুলিতে ছয় মুসলিম নিহত হয়েছেন। তবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চিরাগ গয়াল বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের গুলিতেই মারা গেছেন ওই ছয়জন।
‘‘বাড়িতে তৈরি পিস্তল ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীরা গুলি চালিয়েছেন। এ সময় তাদের গুলিতে ওই বিক্ষোভকারীরা মারা গেছেন। পুলিশ কেবল কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে।’’
রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে দু’জনের প্রাণহানির তথ্য জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আরও হতাহতের তথ্য সামনে আসে। মঙ্গলবার আহতদের মধ্যে দু’জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর ফলে সামভালের মসজিদে সমীক্ষা চালানো নিয়ে স্থানীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দুদের সংঘর্ষে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
গয়াল বলেছেন, মসজিদ ঘিরে তৈরি হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো বলছে, কয়েক শতাব্দী আগে মুঘল সাম্রাজ্যের সময় হিন্দুদের অনেক মন্দিরের ওপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। তাদের এসব অভিযোগ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন আদালতে পিটিশনও দায়ের করা হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে একজন হিন্দু পুরোহিতের দায়ের করা পিটিশনে দাবি করা হয়, হিন্দু মন্দিরের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল সামভালের জামা মসজিদ। পরে উত্তর প্রদেশের স্থানীয় একটি আদালত সামভালের ওই মসজিদের স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেন।
আদালতের এই নির্দেশের কয়েক ঘণ্টা পর সেখানে সমীক্ষা চালাতে যায় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার একটি দল। সেসময় স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দারা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ শুরু করেন।
সামভালের মসজিদের স্থানে গত ১৯ নভেম্বর প্রথম সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এর চার দিন পর দ্বিতীয় সমীক্ষা চালাতে যান কর্মকর্তারা। সেদিন মসজিদের ছবি এবং ভিডিও ধারণের সময় সহিংসতার সূত্রপাত হয়।
পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শাহী জামা মসজিদটি ১৫২৬ সালে মুঘল সম্রাট বাবর এবং হুমায়ুনের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, সপ্তদশ শতকে সামভালের ওই মসজিদটি সংস্কার করা হয়।
সূত্র: এএফপি।
এসএ-০৯/১১/২৪(আন্তর্জাতিক ডেস্ক)