প্রিয় সন্তানদের পা শিকলে বেঁধে রাখেন মা-বাবা!

আচরণগত সমস্যা দু’সন্তানেরই। তিনবেলা যেখানে আহারই জোটে না, সেখানে চিকিৎসা করাবেন কীভাবে? তাইতো বছরের পর বছর ধরে প্রিয় সন্তানদের পায়ে লোহার শিকল লাগিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখছেন নিরূপায় মা-বাবা। চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের আতারপাড়া সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও রওশন আরা দম্পত্তি। বারো বছর বয়স থেকে শুরু হয় তাদের বড় মেয়ে আম্বিয়ার আচরণগত অস্বাভাবিকতা।

পরে পনেরো বছর বয়সে একমাত্র ছেলে রুস্তমেরও হয় একই অবস্থা। দু’জনই মানুষ কিংবা পশু যাকে সামনে পায় তাকেই মারধর করে। বাহিরে যাতে বের হতে না পারে, সেজন্য দু’জনের পায়ে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখেন বাড়ির উঠানে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে।

প্রতিবেশীরা বলেন, দুই সন্তানেরই আচরণগত সমস্যা। এমনিতেই তারা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। আমরাও তাদের অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে পারছি না।
মা রওশন আরা বলেন, আমাদের যদি কেউ সাহায্য সহোগিতা করতে পারে, তবে ছেলে-মেয়েদের চিকিৎসা করাতে পারতাম।

চিকিৎসার চেষ্টা করেও অর্থাভাবে মাঝপথে থেমে যেতে হয়েছে অসহায় বাবা-মাকে। ডাক্তারের মতে, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাই পারে তাদের স্বভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন রেজা বলেন, দীর্ঘ মেয়াদি কোনো মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে যদি চিকিৎসা দেওয়া যায়, তবে আশা করি তারা ভালো হয়ে যাবেন।

অসহায় এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানালেন স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা।
কালাই উপজেলার বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুন নূর নাহিদ বলেন, বিত্তবানরা ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়াবে বলে আশা করি।

কালাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন, এই দুই ভাই-বোনকে প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আরও কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেটি দেখছি।

২০০১ সালে গড়ে উঠা আশ্রয়ণ প্রকল্পে অভাবের সঙ্গে বেড়ে ওঠা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত আম্বিয়ার বর্তমান বয়স ২৬ বছর। আর ছোট ভাই রুস্তমের বয়স ২২ বছর। মায়ের দেওয়া তথ্যমতে, সন্তানদের এমন অবস্থায় তাদের দিনমজুর বাবাও এখন পাগলপ্রায়।

এসএইচ-০২/২০/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)