দাফনের সাড়ে ৪ মাস পর বেরিয়ে এল নারীর অক্ষত মরদেহ

এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে। চলতি বছরের ১ মে মারা যান ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আমবাজ আলীর স্ত্রী রেনুকা খাতুন (৫২)। পরে ওই দিনই ধর্মীয় আচার শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু সেই ঘটনার ৪ মাস ১৬ দিন পর নদী ভাঙনে রেনুকা খাতুনের অক্ষত লাশটি কবর থেকে বেরিয়ে আসে!

পরে এলাকাবাসীর সম্মতিতে ওই এলাকা থেকে ৫০০ মিটার দূরে মরদেহটি পুনরায় দাফন করা হয় বলে নিশ্চিত করেন শিলখুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন ইউসুফ।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ধলডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী জানান, ইউপি মেম্বার আমবাজ আলীর স্ত্রী রেনুকা খাতুন মারা গেলে তাকে বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ অবস্থায় ওই এলাকা সংলগ্ন কালজানী নদীর ভাঙন শুরু হয়। বুধবার সকাল ১০টার দিকে কালজানী নদীর ভাঙনে রেনুকা খাতুনের কবরটির একাংশ ভেঙে পড়ে। এ সময় কবর থেকে তার অক্ষত মরদেহ বেড়িয়ে আসে!

মুহূর্তে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে মরদেহটি দেখতে ঘটনাস্থলে হাজার হাজার উৎসুক মানুষের ঢল নামে।

পরে অক্ষত অবস্থায় কাফনের কাপড় পড়া মরেদহটি উদ্ধার করে দুপুর ১২টার দিকে পুনরায় উত্তর ধলডাঙ্গা শেহের আলী নামের সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

শিলখুড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা লুৎফর রহমান জানান, অক্ষত অবস্থায় পাওয়া মরদেহটি উদ্ধার করে পুনরায় দাফনের কাজে তিনি নিজে নিয়োজিত ছিলেন। মরদেহটিতে কোনোরকম দুর্গন্ধ তো দূরে থাক কাফনের কাপড়ের কোনো পরিবর্তন তিনি দেখেননি। এ জন্য আগের পরা কাফনের কাপড়ে তাকে পুনরায় সমাহিত করা হয়েছে। মৃত্যুর সাড়ে ৪ মাস পরেও এ রকম অক্ষত মরদেহ দেখে তিনি বিস্মিত।

শিলখুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন ইউসুফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ রকম অলৌকিক ঘটনার কথা আগে লোকমুখে শুনেছি। কিন্তু এবার নিজে এ ঘটনা দেখে এটার সাক্ষী হয়ে গেলাম।

তিনি আরও বলেন, শুনেছি তিনি অত্যন্ত দানশীল মহিলা ছিলেন। তার কাছে হাত পেতে কেউ কখনও নিরাশ হননি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন।

এ বিষয়ে জানতে শিলখুড়ি ইউনিয়ন সংলগ্ন পাথরডুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথরডুবি গ্রামের বাসিন্দা ও চিশতীয়া তরিকতের পীর বদিউজ্জামান লালু ফকিরের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তরিকাপন্থি অনেকে আছেন যারা দেহের সাধনা করেন, তাদের অনেকের দেহ মাটিতে পচে না। এ জন্য নিঃসন্দেহে তিনি আল্লাহতায়ালার একজন খাস বান্দা ছিলেন এ কথা স্বীকার করতে হয়।

তবে অনেকে বলেছেন, কোনো মৃতদেহ কবর দিলে সেখানে পচনশীল কোনো ব্যাকটেরিয়ার অনুপস্থিতির কারণে অনেক সময় মৃতদেহ অক্ষত থাকতে পারে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা মোবাইল ফোনে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম সায়েমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এমনটা হওয়া বিজ্ঞান সম্মত নয়। কোনোরূপ সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা ছাড়া দাফনের ১০-১৫ দিনের মধ্যেই প্রাকৃতিক নিয়মেই লাশ পচে যাওয়ার কথা।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর ধলডাঙ্গা গ্রামে কালজানী নদীর ভাঙনে কবর ভেঙে যাওয়া একজন নারীর মরদেহ পুনরায় দাফন করা হয়েছে বলে শুনেছি।

এসএইচ-০৮/১৬/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)