শিক্ষকের সবাই অনুপস্থিত

কলেজে নিয়মানুযায়ী জাতীয় পতাকা উড়ছিল। ক্লাস রুম খোলা। সময় তখন দুপুর ১২টা। রুটিন অনুযায়ী কৃষি বিষয়ে ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু কলেজে নির্ধারিত বিষয়ের শিক্ষক অনুপস্থিত। শুধু তাই নয়, কলেজের অধ্যক্ষসহ ১৮ শিক্ষকের কেউ উপস্থিত নেই।

কর্মচারী আটজনের মধ্যে দুজন উপস্থিত। এ অবস্থায় ক্লাস না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ ভাঙচুর করেছে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কামালপুর এলাকায় অবস্থিত মইনুল মোস্তফা কলেজে বুধবার (৬ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটে।

কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান শামীম ও জীবন সরকার জানান, তারা প্রতিদিন কলেজে এলেও নিয়মিত ক্লাস হয় না। এ অবস্থায় বুধবার ক্লাস করতে এসে শিক্ষার্থীরা দেখে কোনো শিক্ষক উপস্থিত নেই। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী কিছু আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে।

এলাকাবাসী আমজাদ হোসেন জানান, ছিটমহল বিনিময় হওয়ার পর অনেক প্রত্যাশা নিয়ে শিক্ষানুরাগীদের দানকৃত ১ একর ৫ শতাংশ জমিতে ২০১৫ সালে মইনুল মোস্তফা নামে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু ঠিকমতো ক্লাস না হওয়ায় তারা হতাশ।

কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা খান জানান, তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন। বুধবার দুপুরের দিকে এসে জানতে পারেন কলেজে আসবাব ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও জানান, কলেজটি ২০১৫ সালে স্থাপিত হলেও স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি পেয়েছেন ২০১৮ সালে। এরপর ২০২০ সালে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে পাঠদানের অনুমতি পেলে প্রথম বর্ষে ৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে ৬৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ মিলে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩৮ জন। শিক্ষক সংখ্যা ১৮ এবং কর্মচারী সংখ্যা ৮ জন।

তিনি আরও দাবি করেন, সকালে বৃষ্টির হওয়ার পাশাপাশি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় ঘটনার সময় কোনো শিক্ষক কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। পথিমধ্যে ছিলেন। গণ্ডগোল দেখে তারা ভয়ে কলেজে ঢোকেননি। দুজন কমর্চারী থাকলেও তারা ভয়ে কলেজের বাইরে চলে যান। বহিরাগত কিছু ব্যক্তি দু-একজন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মইনুল হক জানান, কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা এখন পর্যন্ত কোনো বেতন-ভাতাদি পান না। তারপরও ক্লাস চালানো হচ্ছে। তবে মাঝেমধ্যে আবহাওয়াজনিত কারণে কিছুটা হেরফের হয়ে থাকে। বুধবার এমনটি ঘটেছে।

এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ঘটনাটি শুনেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএইচ-৩৫/০৬/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)