‘জুতাপেটা’ করা শিক্ষকের থানায় অভিযোগ, বিদ্যালয়ে নেই শিক্ষার্থীরা

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবককে প্রধান শিক্ষক জুতাপেটা করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার সুরাহা এখনো হয়নি। উল্টো এ ঘটনার জের ধরে পাঁচ দিন ধরে বিদ্যালয়ে আসছে না কোনো শিক্ষার্থী। ক্লাসরুমেই অলস সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবি দেরিতে স্কুলে আসেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান এক অভিভাবক। এরই জেরে ওই অভিভাবককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুতা দিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় ১৯ জুলাই দুপুরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা মহাসড়কে মানববন্ধন করেন। এ ঘটনার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় ১১ জন অভিভাবকের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিভাবকরা দাবি করেন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবির বদলি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠাবেন না তারা। অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবির ক্ষমতার অপব্যবহার, অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো, দায়সারা দায়িত্ব পালন, সময়ের ব্যাপারে উদাসীনতা, বিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য উপকরণ সংকট, শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের বিস্কুট বাড়িতে নিয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক অভিযোগ তুলে ধরেন।

১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষিকাসহ সাতজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না আসায় আমরা প্রত্যেক অভিভাবকের বাড়িতে গিয়েছি। অভিভাবকদের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বদলি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে পাঠাবেন না তারা।’

ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক রেজাউনুল হক বাবু বলেন, ‘একজন অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো মানে সব অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো। তাই আমরা লজ্জিত হয়ে ওই বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠাচ্ছি না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদলি না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের স্কুলে পাঠাব না।’

জুতা দিয়ে পেটানোর ঘটনাটি অসত্য দাবি করে পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবি বলেন, ‘স্কুলে কোনো শিক্ষার্থী না আসায় আমরা প্রত্যেক অভিভাবকের বাসায় গিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা অভিভাবক সমাবেশ ডেকেছি। কিছু অভিভাবকের জন্য শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে না। তাই বিশৃঙ্খলা এড়াতে ওই এলাকার ১১ জনের নামে থানায় একটি অভিযোগ করেছি।’

সার্বিক বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য এক সহকারী শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসএইচ-১৬/২৮/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)