ধুমধামে দুই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর বিয়ে

৫০তম আন্তর্জাতিক ও ২৩তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের উদ্যোগে এক বিয়ের আয়োজন করা হয়। গ্রাম-বাংলার রীতি অনুযায়ী আট দশটা বিয়ের মতোই উভয় পরিবারের সম্মতিতে দুই প্রতিবন্ধীর বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সম্পূর্ণ যৌতুকবিহীন এই বিয়েতে উৎসবে মেতে ওঠেন নানা শ্রেণিপেশার প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। ব্যতিক্রমী এই বিয়ে অনেকেরই নজর কেড়েছে। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মনিরুজ্জামান (২৫) বরের সাজে মাথায় টুপি পরে শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে পৌরশহরের ঘোষপাড়া এলাকায় অবস্থিত ওই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। যেখানে স্থাপিত অস্থায়ী সংবর্ধনা মঞ্চে আগে থেকেই কনের সাজে অপেক্ষায় ছিলেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রহিমা খাতুন (২২)।

বরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেইসঙ্গে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। তারপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে দুই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। ৭০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে এই বিয়েটি সম্পন্ন হয়।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কনেকে সঙ্গে নিয়ে বর তার নিজ বাড়িতে ফিরে যান। বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার নগর পলীপালাশ গ্রামের আব্দুর রউফ এর ছেলে মনিরুজ্জামান জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তিনি বর্তমানে স্থানীয় মহিপুর সরকারী দুগ্ধ ও প্রাণি উন্নয়ন খামারে চাকরি করেন।

এদিকে কনে রহিমা খাতুন শেরপুর পৌরশহরের গোসাইপাড়া এলাকার শাহজাহান আলীর মেয়ে। বাড়ির পাশেই অবস্থিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি দর্জির কাজও শিখেছেন এই প্রতিবন্ধী। তিনিও জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।

বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম, শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জানে আলম খোকা, শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সাংবাদিক আলহাজ্ব মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু, কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা উম্মে সুফিয়া বিউটি, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার শেরপুর প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম শরীফ, আনন্দ টিভির বগুড়া জেলা প্রতিনিধি বাঁধন কর্মকার কৃষ্ণ প্রমুখ।

শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আলহাজ্ব মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু জানান, সম্পূর্ণ যৌতুকবিহীনভাবে এই দুই প্রতিবন্ধীর বিয়ে হয়েছে। বরযাত্রী ও অতিথিদের আপ্যায়নসহ বিয়ের সব খরচ তার সংগঠনটির পক্ষ থেকেই করা হয়। এছাড়া ওই দম্পতির নতুন সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকা প্রবাসী উম্মে সুফিয়া বিউটি বলেন, এই বিয়েতে আমি নিজে ৭০ হাজার টাকা খরচ করেছি এবং এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে খুব গর্ববোধ করছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আসলে তারা বোঝা নয়। তাদেরকে ঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারাও আমাদের সম্পদ হয়ে ওঠে। প্রতিবন্ধীরাই এভাবে একে অপরের প্রতি যদি হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসএইচ-০৪/০৪/২১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)