জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর সাম্প্রতিক বক্তব্য তার ব্যক্তিগত উল্লেখ করে দলটি জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তার কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তিনি জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করেন না। তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, তা তার একান্ত ব্যক্তিগত।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের মুজিবুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বিবৃতিতে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অতি সম্প্রতি সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর বক্তব্য নিয়ে কতিপয় জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হল সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি নন। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তার কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তিনি জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করেন না।
সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, তিনি (আব্দুল্লাহিল আমান আযমী) যে বক্তব্য রেখেছেন, তা তার একান্ত ব্যক্তিগত। সুতরাং তার বক্তব্যকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংশ্লিষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। তাঁর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তন ও বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
আমান আযমী বলেন, ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গ-রদ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। এই জাতীয় সংগীত দুই বাংলা এক করার জন্য জাতীয় সংগীত। আমরা কি দুই বাংলা এক হতে চাচ্ছি? আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশ রাখতে চাই, নাকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গীভূত রাজ্য হতে চাই?
‘আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছি, স্বাধীন বাংলাদেশ থাকতে চাই। এই জাতীয় সংগীত আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের পরিপন্থি। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি আমাদের নতুন জাতীয় সংগীত তৈরি করা হোক।’
বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেড নিয়েছিল পাকিস্তানের সংবিধানের অধীনেই পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য, স্বাধীন সংবিধান রচনা করে নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি- আলহামদুলিল্লাহ।
‘কিন্তু তারা জনগণের কাছ থেকে নতুন সংবিধান প্রণয়ণের কোনো ম্যান্ডেড নেয়নি। সুতরাং এই সংবিধান আমার দৃষ্টিতে বৈধ নয়। নতুন করে একটা কমিটি করে নতুন সংবিধান তৈরি করা হোক, এটা বাতিল করা হোক।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার থাকা অবস্থায় ২০০৯ সালে বরখাস্ত হন আমান আযমী। ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের তথ্যকে ‘কাল্পনিক’ বলে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচিত হয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবারও একই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব সাহেব ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩ মিলিয়ন বলেছেন এবং এটাই ৩০ লাখ হয়ে গেছে। কোনো জরিপ ছাড়া ৩০ লাখ শহীদ বলে বলে তারা মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
‘আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আপনারা জরিপ করে বের করেন, একচুয়ালি ৩০ লাখ হোক আর ৩ কোটি হোক। আমার জানামতে, এটা ২ লাখ ৮৬ হাজার। তারা ৩ লাখকে ৩০ লাখ বানিয়ে ফেলেছে। এখনো সময় আছে, জাতিকে সত্য ইতিহাস জানতে দিন। আমাদের নতুন প্রজন্মকে মিথ্যার উপরে আপনারা গড়ে তুলতে দেবেন না। সত্যিকার একটা জরিপ করে আপনারা ব্যবস্থা করেন।’
এআর-০৩/০৮/০৯ (জাতীয় ডেস্ক)